পৌরানিক কাহিনীমহাভারত

অশ্বত্থামা শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপে আজও পৃথিবীতে বেঁচে আছেন

বিশাল মহাভারতের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দ্রোণাচার্য পুত্র অশ্বত্থামা । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অশ্বত্থামাকে এক কঠিন অভিশাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু জানেন কি, কী ছিল তাঁর অভিশাপে? অমরত্ব। আসলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বোঝাতে চেয়েছেন নশ্বর মানব জীবনে অমরত্ব আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষলগ্নে ভীমের সাথে যুদ্ধে গুরুতর আহত হন দুর্যোধন। তখন কৌরব ও পাণ্ডব উভয় পক্ষেই আর গুটিকয়েক প্রাণ জীবিত রয়েছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে কৌরবরা মরণকামড় দিতে চাইলেন। ঠিক হলো নীতিবিরুদ্ধভাবে রাতের অন্ধকারে নিদ্রারত পাণ্ডবভ্রাতাদের বধ করা হবে। এই ষড়যন্ত্রের মূল কুশীলব ছিলেন অশ্বত্থামা।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন নিয়মিত ওম মন্ত্র পাঠে কি কি উপকার হয়

মহাভারতের অশ্বত্থামা

ত্রিকালজ্ঞ শ্রীকৃষ্ণ নিজ ঐশী শক্তিবলে এই ষড়যন্ত্রের কথা আগেই জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু শিবের বর প্রাপ্ত অশ্বত্থামা সেই রাত্রের জন্য ছিলেন অপরাজেয়। এছাড়া যুদ্ধাহত দুর্যোধন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পাণ্ডবদের মৃত্যু সংবাদ না শোনা পর্যন্ত তিনি দেহত্যাগ করবেন না। কাজেই এই ঘটনাকে এড়ানো কারো পক্ষে সম্ভব ছিলনা।

তাই শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে একদিন গভীর রাত্রে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শিবির ছেড়ে পঞ্চপাণ্ডব অন্যত্র চলে গেলেন। সেই রাত্রিতে শিবিরে নিদ্রারত ছিলেন দ্রোপদীর পাঁচ পুত্র। তাঁদের পঞ্চপাণ্ডব ভেবে ভুল করেন অশ্বত্থামা। পাণ্ডবদের বধের উদ্দেশ্যে তিনি যুদ্ধ শিবিরে অগ্নি সংযোগ করলেন। আগুনের লেলিহান শিখায় ভষ্মীভূত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন পাণ্ডবদের পাঁচ পুত্র।

পাণ্ডবদের বধ করেছেন ভেবে উৎফুল্ল অশ্বত্থামা সেই খবর জানালেন যুদ্ধাহত দুর্যোধনকে। পঞ্চপাণ্ডবকে বধের খবর শুনে দেহত্যাগ করলেন দুর্যোধন। এরপরই অশ্বত্থামা বুঝতে পারলেন তিনি ভুল করেছেন। তাই তিনি আবার বদ্ধ পরিকর হলেন পাণ্ডব বংশ নির্মূল করতে। তিনি ব্রহ্মাস্ত্র ক্ষেপণ করলেন যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত অভিমন্যুর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী উত্তরার গর্ভ লক্ষ্য করে। এতে উত্তরার গর্ভস্থ শিশু মারা গেল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনতিবিলম্বে সেই শিশুকে বাঁচিয়ে তোলেন। সেই শিশুই পরবর্তীকালে রাজা পরীক্ষিৎ। যার হাতে রাজ্যপাট সমর্পণ করে মহাপ্রস্থানের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন পাণ্ডবরা।

আরো পড়ুনঃ অজ্ঞাতবাসের সময় পাকিস্তানের এই শিব মন্দিরেই নাকি আত্মগোপন করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব

দ্রোণাচার্য পুত্র অশ্বত্থামার এই পাপ কাজ সহ্য করতে না পারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে ভয়ংকর অভিশাপ দিলেন। কৃষ্ণ বলেছিলেন, দ্রোণাচার্য পুত্রকে সমগ্র মানবজাতির ভার বহন করতে হবে। তাঁর কোন মুক্তি নেই, কখনো তাঁর মৃত্যু হবেনা। ভূতের ন্যায় তিনি নিঃসঙ্গভাবে মর্ত্যলোকে বিচরণ করবেন। মানবসভ্যতার কোন প্রেম বা স্নেহ তাঁকে স্পর্শ করবেনা। জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি উম্মাদের মতো এবং দগদগে ঘা ও ক্ষতে ভরা দেহ নিয়ে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করবেন। তিনি প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুকামনা করবেন, কিন্তু মৃত্যু আসবেনা। যন্ত্রণাময় জীবন বয়ে চলতে হবে কলিযুগের শেষদিন অবধি। তখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বিষ্ণুর শেষ অবতার কল্কিদেবের সঙ্গে।

প্রচলিত বিশ্বাস মতে, অশ্বত্থামা এখনও এই পৃথিবীতে আছেন। অশরীরী বেশে তিনি নর্মদা নদীর তীরে ঘুরে বেড়ান। প্রতিদিন ভোরে তিনি একটি করে গোলাপ ফুল উৎসর্গ করেন মহাকাল মন্দিরে মহাদেবের পায়ে। কেননা একমাত্র তাঁর দয়া হলেই শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবেন দ্রোণাচার্য পুত্র অশ্বত্থামা।

আরো পড়ুনঃ কেন কুন্তীসহ সমগ্র নারী জাতিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠির?

Related Articles

Leave a comment

Back to top button
error: Content is protected !!