২০২৪ সালের দুর্গাপূজার সময়সূচি: বিস্তারিত তিথি ও পূজার রীতি
শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় আচার নয়; এটি বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির উৎসব, যা প্রতিটি হৃদয়ে নতুন আশার আলো জ্বালায়।
শারদীয় দুর্গাপূজা, বাঙালি হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, প্রতিবছর শরৎকালে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৪ সালের দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে ৯ অক্টোবর থেকে, যা চলবে মহাদশমীর বিসর্জনের মাধ্যমে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিটি দিনেই রয়েছে বিশেষ তিথি ও পূজার আচার-অনুষ্ঠান। এখানে ২০২৪ সালের পূজার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি, তিথি, এবং গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতির বিবরণ তুলে ধরা হলো।
দুর্গাপূজার দিনগুলি: তিথি ও সময়সূচি
২০২৪ সালের দুর্গাপূজা মহালয়া থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত পালিত হবে। নিচে প্রতিটি দিনের তিথি ও সময়সূচি দেওয়া হলো:
মহালয়া: ২ অক্টোবর, ২০২৪ (বুধবার)
মহালয়ার দিনটি দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে ধরা হয়। এই দিনেই দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের আহ্বান জানানো হয়। মহালয়া থেকে ঠিক সাতদিন পর শুরু হয় ষষ্ঠীপূজা। মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষদের শ্রাদ্ধ এবং তর্পণের মাধ্যমে তাঁদের স্মরণ করা হয়। মহালয়া হলো এক বিশেষ দিন, যা বাঙালির মনে পূজার আগমনী বার্তা বয়ে আনে।
আরো দেখুনঃ মহালয়া: দুর্গাপূজার আগমনী সুর ও ইতিহাসের পথচলা
ষষ্ঠী: ৯ অক্টোবর, ২০২৪ (বুধবার)
ষষ্ঠী তিথি দিয়ে শুরু হয় মূল দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এই দিন দেবী দুর্গার বোধন, অধিবাস, এবং আমন্ত্রণ করা হয়। বোধন হলো দেবীকে মর্ত্যে স্থাপন করার বিশেষ রীতি। সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে দেবী দুর্গার মহিমা গাওয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ষষ্ঠীর পূজার সময় সাধারণত সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যে শেষ হয়।
মহাসপ্তমী: ১০ অক্টোবর, ২০২৪ (বৃহস্পতিবার)
সপ্তমীর দিন থেকে শুরু হয় দেবী দুর্গার মূল পূজা। সকালে ঘটে পুজো অর্থাৎ দেবী দুর্গার ঘটস্থাপন করা হয়। পুষ্পাঞ্জলি, মন্ত্রপাঠ, এবং দেবীর চরণে অঞ্জলি অর্পণ মহাসপ্তমীর প্রধান আচার। এদিন “কলাবউ” (নবপত্রিকা) স্নান করানো হয় এবং দেবীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। সপ্তমীর পুজো সাধারণত ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে।
মহাষ্টমী: ১১ অক্টোবর, ২০২৪ (শুক্রবার)
মহাষ্টমী হলো দুর্গাপূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। অষ্টমীর সকালে দেবীর উদ্দেশ্যে পুষ্পাঞ্জলি এবং কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমীর বিশেষ আকর্ষণ হলো সন্ধিপূজা, যা অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে পালিত হয়। সন্ধিপূজার সময় ৪৮ মিনিটের এই বিশেষ মুহূর্তকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হয় এবং দেবী দুর্গাকে চামুণ্ডা রূপে পূজিত করা হয়। মহাষ্টমীর দিন ভক্তরা সারাদিন উপবাস রেখে দেবীর আরাধনায় মগ্ন থাকেন।
আরো দেখুনঃ দুর্গা পূজার আচার-অনুষ্ঠানে নারীদের ভূমিকা
মহানবমী: ১২ অক্টোবর, ২০২৪ (শনিবার)
মহানবমীর দিনও দেবী দুর্গার পূজা একই উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হয়। এই দিন দেবীর উদ্দেশ্যে হোম বা যজ্ঞের আয়োজন করা হয়। হিন্দু ধর্মে নবমীকে শুভ শক্তির পূর্ণতার দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নবমীর দিন দেবীকে ‘অন্নপূর্ণা’ রূপে পূজিত করা হয় এবং ভোগ নিবেদন করা হয়।
বিজয়া দশমী: ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ (রবিবার)
দশমী হলো বিজয়া দশমী, দুর্গাপূজার শেষ দিন। এই দিন দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হয়। সকালে দেবীর পূজার পর সিঁদুর খেলা বা সিঁদুরকেলি অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে বিবাহিত নারীরা দেবীকে সিঁদুর অর্পণ করেন এবং একে অপরের মধ্যে সিঁদুর পরিয়ে দেবেন। বিজয়ার মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি এবং মিষ্টিমুখ করে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
দশমীর দিন সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয়। এই সময়টি বাঙালি সমাজে বিষাদের, তবে একই সঙ্গে আনন্দেরও কারণ, কেননা এই বিদায়ের মধ্যে থাকে আবারও এক বছরের প্রতীক্ষা।
আরো দেখুনঃ শারদীয় দুর্গাপূজার ইতিহাস ও গুরুত্ব: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের গল্প
দুর্গাপূজার বিশেষ রীতি-নীতি
- পুষ্পাঞ্জলি: সপ্তমী, অষ্টমী, এবং নবমী; এই তিন দিন ভক্তরা নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে থাকেন।
- সন্ধিপূজা: মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে ৪৮ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়। এটি দেবীর চামুণ্ডা রূপের আরাধনা।
- কুমারীপূজা: মহাষ্টমীর দিনে সাধারণত ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী মেয়েদের দেবীর রূপে পূজিত করা হয়। কুমারীপূজা শক্তির উপাসনার প্রতীক।
২০২৪ সালের দুর্গাপূজা বাঙালির জীবনে উৎসবের এক বিশাল ধারা নিয়ে আসছে। এই পাঁচটি দিন কেবল পূজার নয়; বরং আনন্দ, মিলন, এবং ঐতিহ্যের উদযাপনের। শারদীয় দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় আচার নয়; এটি বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির উৎসব, যা প্রতিটি হৃদয়ে নতুন আশার আলো জ্বালায়।
শুভ দুর্গাপূজা!