রামায়ণের ১০টি গোপন ও অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না
রামায়ণের ১০টি গোপন ও অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না
হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের কাহিনী প্রায় সকলের জানা। মূল রামায়ণ লিখেছিলেন ঋষি বাল্মিকী। এরপর তুলসিদাস ও আরও অন্যান্য পণ্ডিতরা নতুন করে রামায়ণ লিখেছিলেন। সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও রামায়ণের মূল ঘটনা একই। আমাদের আজকের আয়োজনে এমন কিছু তথ্য আছে যা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়না বললেই চলে।
১। রাক্ষসরাজ রাবণ দশ মাথার জন্য সকলের কাছে ভয়ের পাত্র হলেও রাবণ ছিলেন একজন অসাধারণ বীণাবাদক। এছাড়া রাবণ ছিলেন সুশিক্ষিত।
২। ১৪ বছরের বনবাসকালে একদিনের জন্যও ঘুমাননি রামের কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষ্মণ। দাদা ও বৌদিকে রক্ষা করার জন্য দীর্ঘ ১৪ বছরের ঘুম বিসর্জন দিয়েছিলেন লক্ষ্মণ। বনবাস শুরুর প্রথম দিন নিদ্রাদেবী লক্ষ্মণের সামনে আবির্ভূত হন। তখন লক্ষ্মণ অনুরোধ করেন, বনবাসের ১৪ বছর যেন তাঁর চোখে ঘুম না আসে। না ঘুমিয়ে দাদা-বৌদিকে রক্ষা করতে চান তিনি। লক্ষ্মণের অনুরোধে তুষ্ট দেবী জানান, এই ঘুম অন্য কাউকে ভাগ করে নিতে হবে। তখন লক্ষ্মণের স্ত্রী তথা সীতার বোন ঊর্মিলা এই ঘুমের ভার নেন এবং ১৪ বছর তিনি ঘুমিয়ে কাটান। আর এ কারণে রামায়ণে ঊর্মিলা সম্পর্কে তেমন একটা তথ্য জানা যায়না।
৩। রামায়ণ থেকে আমরা লক্ষ্মণ রেখার কথা জানতে পারি। কিন্তু বাল্মীকির রামায়ণে লক্ষ্মণরেখার কোন উল্লেখ নেই।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন বেদ সম্পর্কে বিখ্যাত মনিষীদের বাণী
৪। ১৪ বছরের বনবাসকালে রাম-সীতা-লক্ষ্মণ যে বনে ছিলেন তাঁর নাম দণ্ডকারণ্য। সে কালে এই বনে ভয়ঙ্কর দৈত্যদের বাস ছিল। বর্তমান ওড়িষা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রজুড়ে এই বনের বিস্তৃতি ছিল।
৫। রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ টানা ৬ মাস ঘুমাতো এবং খাবার খেতে একদিনের জন্য জেগে উঠতো। বিশালদেহী কুম্ভকর্ণ রাবণের মতো হিংস্র ও উদ্যত স্বভাবের ছিলনা। রামের বিরুদ্ধে রাবণের দ্বন্ধকে কুম্ভকর্ণ কখনোই সমর্থন করেনি। কুম্ভকর্ণ জন্মলগ্ন থেকেই যে এমন ঘুমকাতুরে ছিল, তা কিন্তু নয়।
দীর্ঘ তপস্যার পরে কুম্ভকর্ণ ব্রহ্মাকে তুষ্ট করলে, ব্রহ্মা তাকে বর দিতে হাজির হন। বর স্বরূপ ইন্দ্রের আসন চাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কুম্ভকর্ণ। কিন্তু সেই সময় দেবরাজ ইন্দ্র তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি দেবী সরস্বতীর কাছে উপস্থিত হয়ে আবদার করলেন, যেভাবেই হোক কুম্ভকর্ণকে আটকাতে হবে। ইন্দ্রের ইচ্ছাস্বরূপ কুম্ভকর্ণ বর প্রার্থনার সময় দেবী সরস্বতী তার জিভটকে ধরেন। ফলে ‘ইন্দ্রাসন’ চাওয়ার বদলে মুখ দিয়ে কুম্ভকর্ণ উচ্চারণ করেন ‘নিদ্রাসন’। সেই জন্যই কুম্ভকর্ণ ৬ মাস ঘুমিয়ে কাটাতো।
৬। কথায় আছে, ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। বিভীষণ ব্যতীত রাম রাবণকে সহজে পরাজিত করতে পারতেন না। রামের বিরুদ্ধে রাবণের যুদ্ধ কোনভাবে মানতে পারছিলেন না বিভীষণ। সীতাকে অপহরণের জন্য তিনি রাবণকে রামের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। তখন রাবণ ক্ষেপে গিয়ে বিভীষণকে ভীষণ তীরস্কার করেন এবং বহিস্কার করেন। তখন বিভীষণ রাবণের পক্ষ ত্যাগ করে রামের পক্ষে চলে আসেন।
আরো পড়ুনঃ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দেবী সরস্বতীর সুদৃশ্য মন্দির!
৭। বেশ কয়েক বছর আগে ভারত ও শ্রীলংকার মধ্যে ভারত মহাসাগরে একটি পাথরের সেতুর খোঁজ পেয়েছে নাসা। প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, গবেষণা করে দেখা গেছে, সেই রামায়ণের সময়কালেই তৈরি হয়েছিল এই সেতু। এই সেতুকে আদম সেতুও বলা হয়।
৮) সীতার সয়ম্বরে ধনুর্ভঙ্গের কাহিনী সকলের জানা। সেই ধনুকটি রাম ছাড়া কেউ তুলে ভাঙ্গতে পারেননি। যেটি অজানা সেটি হল এই ধনুকটি আসলে ছিল মহাদেবের। আর এই ধনুকের নাম ছিল পিনাকা।
৯) রাবণ আগে থেকেই জানতেন যে রামের হাতেই তাঁর মৃত্যু হবে। বিভীষন রামের কাছে রাবণকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। কিন্তু রাবণ মুক্তি পেয়ে ভগবান বিষ্ণুর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ থেকে বিরতি নেননি তিনি বলেছিলেন, “যদি রাম আর লক্ষ্মণ মানুষ হন, তাহলে আমি সীতাকে অপহরণ করব এবং আমিই জিতব। কিন্তু ওরা যদি ভগবান হন তাহলে আমি ওদের হাতেই মারা যাবো এবং মুক্তি পাবো।”
১০) নিজেকে প্রমাণ করতে যখন আবার পরীক্ষা দেওয়ার কথা সীতা রামকে, তখন সীতা ঠিক করেন যে তাঁর মা বসুমতীর কাছেই আবার চলে যাবেন তিনি। মাটির দেবী বসুমতী সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে গেলে, রামও দুঃখ পান। তখন সরযূ নদীতে মানব জন্ম ত্যাগ করেন রাম।
আরো পড়ুনঃ রোজ একবার সমুদ্রে মিলিয়ে গিয়ে‚ আবার সমুদ্র থেকে জেগে ওঠে এই রহস্যময় মন্দির