হিন্দু ব্যতীত শুধু শিখরাই কেন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রবেশ করতে পারে?
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে চাইলেই যে কোন ধর্মের মানুষ প্রবেশ করতে পারবেনা। এমনকী হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি তাঁদের জীবনাচরণ ও নিজ দর্শনের হেতু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাননি।
তবে হিন্দু ধর্মানুসারী ছাড়া আর একটি ধর্মানুসারীদের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশাধীকার আছে। গুরু নানক প্রবর্তিত শিখ ধর্মানুসারীরা প্রবেশ করতে পারেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। এই ব্যতিক্রম নিয়ে একটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছে।
আরো পড়ুনঃ পৃথিবীর একমাত্র মন্দির যেখানে হনুমানজি পূজিত হন স্ত্রী বেশে
আজ থেকে প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক পুরীতে এসেছিলেন। একেশ্বরবাদের বাণী নিয়ে তিনি তখন সমগ্র ভারতবর্ষ চষে বেড়াচ্ছেন। গুরু নানকের সাথে মারদানা নামে এক ভক্ত ছিলেন। দীর্ঘ পথ চলতে চলতে মারদানা ছিলেন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত। কিছু একটা খাওয়ার জন্য তারা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তখন গুরু নানক ও মারদানা সমুদ্র পাড়ে গিয়ে বসে রইলেন।
ক্ষুধার্ত মারদানা গুরুর কাছে অভিযোগ করে বললেন, যে মন্দিরে খাওয়া পাওয়া যাবেনা, সেখানে কেন তিনি তাঁকে নিয়ে এসেছেন! মৃদু হেসে গুরু নানক বললেন, চিন্তা করোনা।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সমুদ্রতটে এক সৌম্যদর্শন ব্রাহ্মণ খাবার নিয়ে এলেন। স্বর্ণের পাত্রে সুন্দর করে পরিবেশিত সেই খাবার মারদানা ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে খেলেন।
পরদিন অতি ভোরে পুরী মন্দিরে হইচই পড়ে গেলো। জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদের স্বর্ণের থালাবাসন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এই সংবাদ শুনতে পেলেন পুরীর রাজা। তৎক্ষণাৎ তাঁর মনে পড়লো গত রাতে দেখা এক অদ্ভুত স্বপ্নের কথা। তাঁর স্বপ্নে হাজির হয়েছিলেন স্বয়ং জগন্নাথদেব। তিনি রাজাকে বললেন, সমুদ্র পাড়ে তাঁর স্বর্ণের বাসন আছে। সেই সাথে এটাও বললেন, বাসনের কাছে যারা আছেন তাঁদের যেন সম্মানসহকারে মন্দিরে নিয়ে আসা হয়।
আরো পড়ুনঃ ভারতের এই রহস্যময় মন্দির বছরের ৮ মাস জলের তলায় থাকে
লোকজনসমেত রাজা সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষ্মিত হয়ে গেলেন। দেখলেন সত্যিই সেখানে পড়ে আছে জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদের পাত্র। আর তাতে লেগে আছে মহাপ্রসাদের অংশ। পাত্রের কাছেই বসে আছেন এক ধ্যানমগ্ন বৃদ্ধ।
ধ্যানভঙ্গ হলে গুরু নানক রাজাকে দেখতে পেলেন। তিনি রাজাকে সব ঘটনা খুলে বললেন। রাজার বুঝতে বাকি রইলো না স্বয়ং জগন্নাথদেব এই প্রসাদ দিয়ে গেছেন অভুক্তদের।
রাজা বুঝতে পারলেন এই বৃদ্ধ লোকটি নিশ্চয় কোন মহাপুরুষ। তখন তিনি গুরু নানক ও মারদানাকে নিজ প্রাসাদে নিয়ে গেলেন, অতঃপর মন্দিরে। কথিত আছে যে, শিখ ধর্মের বিখ্যাত আরতি “গগন মে থাল” পুরীতে বসেই রচনা করেছিলেন গুরু নানক।
আরো পড়ুনঃ অজ্ঞাতবাসের সময় পাকিস্তানের এই শিব মন্দিরেই নাকি আত্মগোপন করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব
সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও পুরী জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত শিখ ধর্মাবলম্বীদের জন্য। অন্য অহিন্দুদের জন্য যেখানে এই মন্দিরের দরজা আজও বন্ধ, সেখানে গুরু নানকের অনুসারীদের জন্য অবারিত দ্বার।