মুসলিম দেশ ইয়েমেনে হিন্দু ধর্ম
১৮৩৯-১৯৩২ সাল পর্যন্ত ইয়েমেনকে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশরা শাসন করেছে। ফলে এই দীর্ঘ সময়ে ইয়েমেনের সাথে ভারতীয়দের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছিল।
আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি দেশ ইয়েমেন। সুউচ্চ পর্বতমালা ইয়েমেনের উপকূলীয় সমভূমিকে অভ্যন্তরের জনবিরল মরুভূমি থেকে পৃথক করেছে। দেশটির প্রায় অর্ধেকের বেশী মানববসতির অনুপযোগী।
প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে অনেকগুলো সমৃদ্ধ সভ্যতার অবস্থান ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এলাকাটির গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং প্রায় এক হাজার বছরের বেশী সময় এটি একটি দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শেষে এসে এখানে খনিজ তেল আবিষ্কার হলে, ইয়েমেনের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ মুসলিম দেশ ইরানে হিন্দু ধর্ম
১৯৯০ সালে ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র (উত্তর ইয়েমেন) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী ইয়েমেন (দক্ষিণ ইয়েমেন) দেশ দুইটিকে একত্রিত করে ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র গঠন করা হয়। ইয়েমেনের পশ্চিমে লোহিত সাগর এবং দক্ষিণে এডেন উপসাগর। এটি আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বাব এল মান্দেব প্রণালীর মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান অবস্থিত। সৌদি আরব ও ওমানই ইয়েমেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
ইয়েমেন একটি মুসলিম রাষ্ট্র। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইয়েমেনের বেশীরভাগ অধিবাসী সুন্নী ও শিয়া মুসলিম। ইয়েমেনে প্রায় দুই লক্ষ হিন্দু ধর্মানুসারী বসবাস করে। স্বাভাবিকভাবেই এদের বেশীরভাগই ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দু।
আরো পড়ুনঃ ১২ জন হিন্দু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনে নিয়োগ পেয়েছেন!
প্রাচীনকাল থেকেই ইয়েমেনের সাথে ভারতবর্ষের সংযোগ ছিল। তবে ১৮৩৯ সালে ইয়েমেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলে এই সংযোগ আরো গভীর হয়। কেননা তখন ইয়েমেনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বোম্বে প্রেসিডেন্সী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। তখন ইয়েমেনের এডেনে ২০০০ সদস্য বিশিষ্ট ভারতীয় সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা হয়। এছাড়া ভারতের মুদ্রা রূপীকে ইয়েমেনের অফিসিয়াল কারেন্সী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৮৫৫ সালে এডেন বন্দরের সাথে বোম্বের একটি পাক্ষিক স্টিমার সার্ভিস চালু করা হয়। এর ফলে এই সুযোগে অনেক ভারতীয় হিন্দু ইয়েমেনে পাড়ি জমান। এডেনের ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেমকে উন্নত করা এবং বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ১৯০৬ সালে একদল ভারতীয় প্রকৌশলীকে ব্রিটিশ সরকার এডেনে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাম মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে অযোধ্যা রেল স্টেশন
১৮৩৯-১৯৩২ সাল পর্যন্ত ইয়েমেনকে ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশরা শাসন করেছে। ফলে এই দীর্ঘ সময়ে ইয়েমেনের সাথে ভারতীয়দের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছিল। এই সময়কালে ইয়েমেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের আর্থিক অবস্থারও বেশ উন্নতি হয়েছিল। ইয়েমেনের সরকারী নথি থেকে জানা যায়, ১৮৫৬ সালে ইয়েমেনে ৮৫৬৩ জন ভারতীয় হিন্দু ছিলেন, যা ১৯৫৫ সালে দাঁড়ায় ১৫৮১৭ জনে।
বর্তমানে ইয়েমেনের এডেন, মুকাল্লা, শিহর, লাহাজ, মোকা এবং হোদেইদা শহরে সবচেয়ে বেশী হিন্দু বসবাস করে। এদের মধ্যে অনেকেই ইয়েমেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে এবং ইয়েমেনের স্থানীয় নাগরিকদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করছে।
আরো পড়ুনঃ গীতার ১৮ টি নামের মাহাত্ম্য জানুন
ইয়েমেনের এডেনে ৫টি হিন্দু মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হিন্দু মন্দির হলো শ্রী তারিচমার্গ মন্দির, যা ১৮৬২ সালে নির্মিত হয়েছিল। আরো দুটি প্রাচীন মন্দির হলো শ্রী রামজি মন্দির এবং হনুমানজি মন্দির, যা যথাক্রমে ১৮৭৫ ও ১৮৮২ সালে নির্মিত হয়। অন্য মন্দিরগুলো হলো, শ্রী হিংরাজ মাতাজি মন্দির এবং শ্রী শঙ্কর হনুমান মন্দির।
ইয়েমেনের স্থানীয় মুসলমান ও ভারতীয় হিন্দুরা পারস্পরিক সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। ফলে একে-অপরের সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের এক ব্যতিক্রমী সংমিশ্রণ ঘটেছে ইয়েমেনে।