আমেরিকায় হিন্দু ধর্মের এতো শক্তিশালী অবস্থানের প্রকৃত কারণ কী?
আমেরিকায় হিন্দু ধর্ম একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। আমেরিকার মোট জনসংখ্যার শতকরা ০.৫ শতাংশ হিন্দু ধর্মানুসারী। আমেরিকান হিন্দুদের অধিকাংশই অভিবাসী হিন্দু অর্থাৎ এদের অধিকাংশই ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান, ফিজি, সুরিনাম ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে আগত। এছাড়া স্বল্পসংখ্যক ধর্মান্তরিত হিন্দু রয়েছেন।
Immigration and Nationality Services Act of 1965 পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত আমেরিকায় হিন্দু সংখ্যা ছিল নগণ্যসংখ্যক। United States Department of State কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকায় বসবাসরত মোট হিন্দু সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন বা ১৫ লক্ষ; যা আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ০.৫%। তবে অন্য আরেকটি সূত্র মতে, আমেরিকার মোট হিন্দু জনসংখ্যা ২৪ লক্ষ। হিন্দু জনসংখ্যা অনুপাতে, আমেরিকা বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। আমেরিকায় বসবাসরত এশীয়দের মধ্যে ১০% সনাতন হিন্দু ধর্মানুসারী।
আরো পড়ুনঃ কানাডায় হিন্দু ধর্মের প্রভাবশালী অবস্থান যেভাবে তৈরী হলো!
আমেরিকান হিন্দুরা আমেরিকায় বসবাসরত অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলির চেয়ে উচ্চতর সামাজিক অবস্থানে অবস্থান করছেন। তাঁদের আয়ের মাত্রা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক উঁচু স্তরের। শতকরা ৪৮ ভাগ আমেরিকান হিন্দুরই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। Pew Research Center এর ধর্ম ও নাগরিক জীবন সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র থেকে দেখা যায়, ৪৮% আমেরিকান হিন্দুর পারিবারিক আয় ১,০০০০০ (এক লক্ষ) মার্কিন ডলার বা তাঁর বেশী। অন্তৎ ৭০% আমেরিকান হিন্দু ৭৫,০০০ মার্কিন ডলার আয় করেন। আমেরিকার ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ।
হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন মতবাদ যেমন, কর্মবাদ, যোগসাধনা ও পুনর্জন্মবাদ – মূলধারার আমেরিকানদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। শতকরা ২৪ ভাগ আমেরিকান হিন্দু পুনর্জন্মবাদ বিশ্বাসী।
হিন্দু নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগোতে World Parliament of Religions এ ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি দুই বছর আমেরিকাতে অবস্থান করেছিলেন। এই সময়কালে তিনি শিকাগো, ডেট্রয়েট, বোস্টন ও নিউইয়র্কে বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুনঃ ফিজিতে হিন্দু ধর্ম যেভাবে অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে স্থান করে নিল!
১৯০২ সালে স্বামী রামতীর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তিনিও আমেরিকাতে দুই বছর অবস্থান করেন এবং বেদান্ত দর্শন প্রচার করেন। এরপর স্বামী পরমহংস যোগানন্দ ১৯২০ সালে বোস্টনে আয়োজিত International Congress of Religious Liberals এ ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেছিলেন।
১৯৬৫ সালে Immigration and Nationality Services Act পাস হওয়ার পরেই হিন্দু অভিবাসীদের জন্য আমেরিকার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যায়। ষাটের দশকেই মার্কিন কাউন্টার-কালচার আন্দোলনের রেশে শ্রীল প্রভুপাদ প্রতিষ্ঠিত ইসকন সহ অন্যান্য হিন্দু আন্দোলনগুলো বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করে।
আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো প্রথাগত হিন্দু মন্দির হল মহাবল্লভ গণপতি দেবস্থানম। ১৯৭৭ সালের ৪ জুলাই নিউইয়র্ক সিটির ফ্লাসিং-এর Hindu Temple Society of North America এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করে।
আরো পড়ুনঃ পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মের মানুষেরা আদৌ কী ভালো আছে?
১৯৮১ সালে স্থাপিত ম্যালিবু হিন্দু মন্দির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মন্দির। Hindu Temple Society of Southern California এই মন্দিরটি নির্মাণ করে। শ্রীরাসেশ্বরী রাধারানী মন্দির হলো টেক্সাসের সবচেয়ে পুরনো মন্দির। এটি অস্টিনের রাধামাধব ধামে অবস্থিত। কৃপালু মহারাজ এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মিশিগানের পন্টিয়াকের পরাশক্তি মন্দির একটি শাক্ত মন্দির।
আমেরিকায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের এই ভিডিও দেখুন।