সোনারং জোড়া মঠ ও শ্যামসিদ্ধির মঠ বাংলাদেশের দুটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য হিন্দু মন্দির। তবে এই মন্দির দুটির বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। সনাতন পন্ডিতের আজকের আয়োজনে চলুন জেনে নিই এই মন্দির দুটির নানা অজানা কথা।
সোনারং জোড়া মঠ
বাংলাদেশের একটি প্রাচীন নিদর্শন সোনারং জোড়া মঠ। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরটি বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত। এই মন্দির প্রাঙ্গণে দুটি সুউচ্চ মঠ পাশাপাশি অবস্থিত।
মন্দিরে স্থাপিত একটি লিপি থেকে জানা যায়, রূপচন্দ্র নামের এক হিন্দু বণিক ১৮৪৩ সালে বড় মঠ এবং ১৮৮৬ সালে ছোট মঠ নির্মাণ করেন। বড় মন্দিরটি কালী মন্দির ও ছোটটি শিব মন্দির।
কথিত রয়েছে এই মঠেই শ্রী রূপচন্দ্রের অন্ত্যষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এই মঠ দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়েও উঁচু। আদতে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বোচ্চ স্থাপনা। অষ্টভুজ আকৃতির এই মঠের প্রস্থ ২১ ফুট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মঠের দেয়াল বেশ পুরু।
বর্তমানে মঠদুটি মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মন্দির দুটোর মূল উপসনালয় কক্ষের সাথে রয়েছে বারান্দা। বড় মন্দিরের বারান্দা ১.৯৪ মিটার ও ছোট মন্দিরের বারান্দা ১.৫ মিটার। মূল মন্দিরের ছাদ নিচু গোলাকার গম্বুজ আকৃতির।
মন্দিরের সামনে বেশ বড় একটি পুকুর রয়েছে। ধারণা করা হয় বড় মন্দির তৈরির সমসাময়িক এই পুকুর খনন করা হয়েছিল। মন্দির দুটির বাইরের দেয়ালে রয়েছে অসংখ্য ফাঁকফোকর। যেখানে বসবাস করে নানান জাতের পাখি।
বিভিন্ন সময় এই মন্দির দুটোর মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া গেছে। মন্দিরের শিখরে দণ্ডায়মান ত্রিশুলটি বর্তমানে বাঁকা অবস্থায় আছে। এটিও বেশ কয়েকবার চুরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
মন্দির দুটোর পুরনো দেয়াল অযত্ন আর অবহেলায় খসে পড়ছে। জায়গায় জায়গায় ধরেছে বড় ধরণের ফাটল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সাইনবোর্ড টাঙিয়ে নিজেদের দায় সেরেছে।
কীভাবে যাবেন?
শ্রীনগর থেকে লোকাল বাস যায় টঙ্গীবাড়ী। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকেও বাসে চড়ে টঙ্গীবাড়ী যাওয়া যায়। সেখান থেকে অটো রিকশায় যাওয়া যাবে সোনারং গ্রামে।
শ্যামসিদ্ধির মঠ
শ্যামসিদ্ধির মঠ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন হিন্দু মন্দির। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি গ্রামে এই মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরের দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের উপরে রয়েছে বাংলা শিলালিপি। উক্ত শিলালিপি থেকে জানা যায়, বিক্রমপুরের ধনাঢ্য ব্যক্তি শম্ভুনাথ মজুমদার ১৮৩৬ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি রয়েছে শম্ভুনাথ স্বপ্নে নির্দেশ পান, তার স্বর্গীয় পিতার চিতার উপর মঠ নির্মাণের।
মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত এ মঠ। এর দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের উপরে রয়েছে বাংলা শিলালিপি। সেটা থেকে জানা যায় ১৮৩৬ সালে বিক্রমপুরের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে সম্ভুনাথ স্বপ্নে তার স্বর্গীয় পিতার চিতার উপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পান। তারপর তিনি এই স্থাপনা তৈরি করেন।
প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এই মঠ দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই এটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ। অষ্টভুজ আকৃতির এ মঠ দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ২১ ফুট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মঠের দেয়াল বেশ পুরু।
মঠের উপরের দিকে বাইরের দেয়াল জুড়ে অনেক খোড়ল। এগুলোতে বাসা বেঁধেছে শত শত সবুজ টিয়া, ঝুটি শালিক। তাই মঠটি সবসময়ই পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।
বর্তমানে একেবারে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে স্থাপনাটি। মঠের গায়ের মূল্যবান পাথর, পিতলের কলসী চুরি হয়ে গেছে অনেকদিন আগে। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চুরি হয় মন্দিরের তিন ফুট উঁচু কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ। তবু আপন সৌন্দর্যে মন্দিরটি আজও মোহনীয়। তাই তো আজও প্রাচীন এই স্থাপনাটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করে শ্যামসিদ্ধিতে।
কীভাবে যাবেন?
শ্রীনগর থেকে সহজেই রিকশায় করে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে যাওয়া যায়। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে শ্রীনগরের বাসে ছাড়ে।
উপমহাদেশের সর্বোচ্চ এই মঠগুলো হতে পারত বিশ্ব ঐতিহ্যর অংশ, ঠিক কুতুব মিনারের মতোই। আমাদের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরই বা কতটুকু এগিয়ে আসছে দেশের এসব স্থাপনাগুলোকে সংরক্ষণের কাজে?