দেশে দেশে হিন্দুধর্ম

কমিউনিস্ট দেশ কিউবা-তে হিন্দু ধর্ম যেভাবে বিস্তার লাভ করলো

কমিউনিস্ট দেশ কিউবা-তে হিন্দু ধর্ম যেভাবে বিস্তার লাভ করলো

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি দেশ কিউবা। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে বৃহত্তম দ্বীপ কিউবা। দ্বীপটি আশেপাশের অনেকগুলি ছোট দ্বীপের সাথে মিলে কিউবা প্রজাতন্ত্র গঠন করেছে। সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সারাবিশ্বের কাছে কিউবার আলাদা পরিচিতি রয়েছে।

কিউবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। ক্যারিবীয় সাগর ও মেক্সিকো উপসাগরের মধ্য দিয়ে সমস্ত সমুদ্রপথের উপর দেশটি অবস্থিত। কিউবার উত্তরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বে টার্ক্‌স ও কেইকোস দ্বীপ এবং হাইতি, পশ্চিমে মেক্সিকো, আর দক্ষিণে জ্যামাইকা ও কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ। উর্বর ভূমি এবং আখ ও তামাকের ফলনের প্রাচুর্যের ফলে কিউবা ইতিহাসের অধিকাংশ সময় ধরেই ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র।

আরো পড়ুনঃ আফ্রিকার দেশ কঙ্গো-তে হিন্দু ধর্ম যেভাবে বিস্তার লাভ করলো!

কিউবা হাইতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপ এবং জ্যামাইকার খুব কাছে অবস্থিত বলে ঐ সব দেশ থেকে কিউবায় প্রচুর লোক যাওয়া-আসা করেন। এই যাতায়াতের ফলে কিউবাতে বহু ধরনের গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সহাবস্থান ঘটেছে। কৃষিতে সমৃদ্ধ হলেও কিউবা খুব কম কৃষিদ্রব্যই রপ্তানি করে, এর মধ্যে আছে চিনি, তামাক, লেবুজাতীয় ফল এবং বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত দ্রব্য।

কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। স্পেনের কনকিস্তাদোরেরা এই দ্বীপকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকাতে আক্রমণ চালাত। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে, স্পেনের অধিকাংশ উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করার বহু দশক পর, কিউবার লোকেরা একটি স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৮৬৮ সাল নাগাদ কিউবার লোকেরা তাদের তিনটি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথমটিতে লড়া শুরু করে। ১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে প্রবেশ করে কিউবার পক্ষ নিয়ে স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তারা কিউবাকে মার্কিন প্রতিরক্ষার অধীনে স্বাধীন ঘোষণা করে।

আরো পড়ুনঃ মসজিদকে পাশে নিয়ে হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির

১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি বাতিস্তা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং কিউবায় একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রবর্তন করেন। তখন থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কাস্ত্রো দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সব রকম নীতিবিষয়ক সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৯৬০-এর দশকে কাস্ত্রো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিশ্বের প্রধান সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৬১ সালে কাস্ত্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবা সরকারি ভাবে মার্কসবাদ গ্রহণ করে।

এক লক্ষ ৯ হাজার ৮৮৪ বর্গ কিমি আয়তনের এই দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ। সাংবিধানিকভাবে কিউবা একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। তবে দেশটি ধর্ম বিশ্বাসীদেরও পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়। ২০১০ সালে পিউ ফোরামের তথ্যমতে কিউবার ৬৫% মানুষ খ্রীস্টান ধর্মানুসারী। দেশটিতে খুব অল্প সংখ্যক হিন্দু ও মুসলিম বসবাস করেন।

কিউবার জনসংখ্যার মাত্র ০.২০-০.২১ ভাগ হিন্দু ধর্মানুসারী। ২০০৭ সাল পর্যন্ত কিউবায় হিন্দু সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৯২৭ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৩০ হাজারের মতো। কিউবার হিন্দুরা মূলত ভারতীয় হিন্দু। তবে পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কিউবাতেও ইসকনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইসকনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিউবান সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কিউবার রাজধানী হাভানার শিল্পাঞ্চলের কাছে রাশিয়ান ইসকন কর্তৃক একটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটিই কিউবার একমাত্র হিন্দু মন্দির। তবে সমগ্র কিউবা জুড়েই ইসকনের মতাদর্শীরা ছড়িয়ে রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু ব্যতীত শুধু শিখরাই কেন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রবেশ করতে পারে?

এই মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে ইসকনের ভক্ত প্রিয়া দাসের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে ইসকনের প্রার্থনা কেন্দ্র ছিল। প্রিয়া দাস বলেন, কিউবার মত দেশ, যেখানে মদ্য পান আর খোলামেলা যৌনতা একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, গরু যেখানে জাতীয় খাদ্য, সেখানে কড়াকড়িভাবে হিন্দুত্ব মেনে চলা খুবই কঠিন। সদ্য হিন্দু গ্রহণকারী একজন বলছিলেন, আমরা নিরামিষ খাবার চাই, সেটা পাওয়া মোটেও সহজ নয়। তবে সবার সঙ্গে আমাদের খুব চমৎকার সম্পর্ক।

প্রিয় ভিউয়ার্স, পোস্টটি শেয়ার করতে একদম ভুল করবেন না কিন্তু।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!