পৌরানিক কাহিনী

দুই হাজার বছর আগে অযোধ্যার রাজকন্যা যেভাবে কোরিয়ার রানী হয়েছিলেন!

রামায়ণে বর্ণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অযোধ্যা। ভগবান রামের জন্মভূমি হিসেবে হিন্দু ধর্মে অযোধ্যার আলাদা একটি গুরুত্ব রয়েছে। রামের জন্ম ও লীলাক্ষেত্র ছাড়াও অযোধ্যার আরেকটি সংযোগ পাওয়া গেছে সম্প্রতি।

ভারতবর্ষ থেকে অনেক দূরের দেশ কোরিয়ার সাথে অযোধ্যার একটি সংযোগ রয়েছে। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনা একদম সত্যি। প্রতি বছর হাজার হাজার কোরিয়ান পর্যটক অযোধ্যা ভ্রমণে আসেন। তারা মূলত আসেন তাদের কিংবদন্তীতুল্য রানী হিও ওয়াং-ওকে (Heo Hwang-ok) শ্রদ্ধা জানাতে। ভাবছেন অযোধ্যার সাথে কোরিয়ান রানীর সম্পর্ক কোথায়? ধৈর্য ধরুন শীঘ্রই সব খোলাসা করছি।

ইতিহাস আসলে কী বলছে?

অযোধ্যার সাথে কোরিয়ার সংযোগ জানতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে অন্তত দুই হাজার বছর পিছনে। ধারণা করা হয় যে, খ্রিস্টীয় ৪৮ সালে রানী সুরিরত্না ভারতবর্ষের অযোধ্যা থেকে কোরিয়ায় গমণ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে কোরিয়ায় তাঁকে ডাকা হয় হিও ওয়াং-ওকে নামে।কিংবদন্তী আছে যে, অযোধ্যার তৎকালীন রাজা স্বপ্নে দেখেন যে, কুলদেবতা তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর ১৬ বছর বয়সী মেয়ে সুরিরত্নাকে কোরিয়াতে (বর্তমান দক্ষিণ কোরিয়া) পাঠানোর জন্য এবং রাজা কিম সুরোকে বিয়ে করতে।

ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন সুরিরত্না যাত্রাপথে একটি পাথর বহন করেছিলেন, যা সমুদ্রপথে ভ্রমণের সময় সমুদ্রকে শান্ত রেখেছিল। কিংবদন্তী আছে যে, এই পাথরের কারণে তিনি একটি ছোট্ট নৌকা দিয়ে কোন দুর্ঘটনা ছাড়া কোরিয়া পৌঁছতে পেরেছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার উপকথা ও ইতিহাস বিষয়ক বিখ্যাত গ্রন্থ সমগুক যোশা-তে (Samguk Yusa) রানী হিও ওয়াং-ওকে অযোধ্যার রাজকন্যা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ রামায়ণের ১০টি গোপন ও অজানা তথ্য যা আপনি জানেন না

কোরিয়ায় পৌছে অযোধ্যার রাজকন্যা সুরিরত্না তথা হিও ওয়াং ওকে রাজা কিম সুরোকে বিয়ে করেন। কথিত আছে তাঁরা প্রায় ১৫ বছর বেঁচেছিলেন এবং ১০ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ঐতিহ্যগতভাবে কোরিয়ান পিতার সন্তানরা পিতার বংশ পদবী পেয়ে থাকে। দশ সন্তানের কেউ মায়ের পদবী পাবেনা জেনে খুব মন খারাপ হয় রানী হিও’র। তখন রাজা সুরো দুটি সন্তানের নামের ক্ষেত্রে রানীর পদবী হিও (Heo) ব্যবহারের সুযোগ দেন।

অযোধ্যা
রাজা কিম সুরো ও রানী হিও ওয়াং-ওকে

আজকের ঐতিহাসিকরা বলছেন, এই দম্পতির বর্তমান বংশধর সংখ্যা ছয় মিলিয়নের বেশী, যা দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ১০%। কারাক রাজবংশ তথা রানীর সেই বংশধররা আজও অযোধ্যা থেকে রানীর নিয়ে আসা সেই পাথরকে সংরক্ষণ করে চলেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি কিম ডায়ে-জং (Kim Dae-jung) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী কিম জং-পিল (Kim Jong-pil) নিজেদের কারাক রাজবংশের উত্তরসূরী বলে জানিয়েছিলেন।

আরো পড়ুনঃ কুম্ভকর্ণ ছয় মাস ধরে ঘুমাতেন কেন?

২০০১ সালে ভারতের অযোধ্যায় সরযু নদীর তীরে রানী হিও ওয়াং-ওকে স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরী করা হয়। প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক কোরিয়ান পর্যটক রানীর মাতৃভূমিতে রানীকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে আসেন।

২০১৬ সালে একদল কোরিয়ান প্রতিনিধি উত্তর প্রদেশ সরকারের কাছে এই স্মৃতিস্তম্ভের উন্নয়নের জন্য একটি প্রস্তাব রাখে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!