চলতি খবর

মতুয়া কারা? মতুয়া সম্প্রদায় কে গড়ে তোলেন?

মতুয়া সনাতন হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ সম্প্রদায়। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুর প্রেমভক্তিরূপ সাধনার ধারাকে আরো গতিশীল ও বেগবান করার জন্য যে সহজ সাধন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন, তাঁকে বলা হয় ‘মতুয়াবাদ’। আর এই মতবাদের অনুসারীদেরকেই মতুয়া নামে অভিহিত করা হয়।

মতুয়া শব্দটির অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। হরিনামে যে মেতে থাকে বা মাতোয়ারা হয়, সে-ই মতুয়া। মতান্তরে ধর্মে যার মত আছে সেই মতুয়া। অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস, গুরু-দেবতা-ব্রাহ্মণে ভক্তিশ্রদ্ধা, হরিনামে রুচি ও প্রেমে নিষ্ঠা আছে যার, সে-ই মতুয়া।

আরো পড়ুনঃ বৃন্দাবন ধামের অজানা ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড

মতুয়া মতবাদে বিশ্বাসীরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, তাঁরা বৈদিক ক্রিয়া-কর্মে আস্থাশীল নয়। তাদের বিশ্বাস ভক্তিতেই মুক্তি। তাদের সাধন-ভজনের মাধ্যম হচ্ছে নাম সংকীর্তন। মতুয়া সাধন পদ্ধতির মাধ্যমে ঈশ্বরলাভ ও সত্যদর্শন-ই মূল লক্ষ্য। ঈশ্বর লাভের অন্যতম উপায় প্রেম। পবিত্রতা শরীর-মনে প্রেম জাগ্রত করে, ফলে প্রেমময় হরি ভক্তের হৃদয়ে আবির্ভূত হন।

আদর্শ গার্হস্থ্য জীবনযাপনের মাধ্যমেই মতুয়া ধর্মের চর্চা করা যায়। এই ধর্মের অনুসারীদের ১২টি নিয়ম পালন করতে হয়, যা দ্বাদশ আজ্ঞা নামে পরিচিত। মতুয়া ধর্মে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া মতুয়া মতবাদে বিধবা বিবাহকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করা হয়েছে।

মতুয়া ধর্মপ্রচারককে গোঁসাই নামে অভিহিত করা হয়। নারী-পুরুষ যে কেউ এই ধর্মের প্রচার করতে পারেন। মতুয়ারা প্রতি বুধবার একত্রে সমবেত হয়ে হরি স্মরণ করে, একে বলা হয় হরিসভা। সবাই নাম সংকীর্তন করে এবং ভাবের আবেশে কীর্তন করতে করতে অনেক সময় বাহ্যজ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। কীর্তনের সময় তাঁরা যে বাদ্যযন্ত্রগুলো ব্যবহার করে, তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কাঁসর, জয়ডঙ্কা, শঙ্খ, শিঙ্গা প্রভৃতি।

আরো পড়ুনঃ নেপালের এই জায়গায় এখনো দেখা যায় ভগবান কৃষ্ণের পায়ের ছাপ!

গোঁসাইদের হাতে থাকে সোয়া হাত দীর্ঘ একটি দন্ড, যার নাম ছোটা। এই ছোটা নিয়ে তাঁরা সামনে এগিয়ে যান, আর ভক্তরা তাঁদের অনুসরণ করেন। তাঁরা সাদা রঙে বেষ্টিত লাল নিশান ও গলায় করঙ্গের মালা ধারণ করেন। মতুয়ারা হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ ধারা হলেও তাঁদের নিজস্ব ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। তাঁদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত’।

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের প্রধান মন্দির অবস্থিত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে সেখানে মেলা বসে। তাতে সমগ্র দেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত প্রণামী হিসেবে ধান-চাল-ডাল, তরি-তরকারি ইত্যাদি নিয়ে উপস্থিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, আন্দামানসহ বিভিন্ন স্থানেও মতুয়ারা রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেশ বড় সংখ্যক মতুয়া অনুসারীর বসবাস হওয়ায়, পশ্চিমবঙ্গের ভোটের রাজনীতিতে মতুয়াদের বেশ প্রভাব রয়েছে। 

মতুয়া ধর্মের কয়েকটি মূল বাণী হলো: ‘হরি ধ্যান হরি জ্ঞান হরি নাম সার। প্রেমেতে মাতোয়ারা মতুয়া নাম যার; জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা। ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা; কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই। বেদ-বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই।

আরো পড়ুনঃ জীবনে উন্নতি করতে চাইলে গীতার এই ৭টি উপদেশ আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!