জানেন কী দেবী সরস্বতী আসলে কে? দেবী সরস্বতীর জন্ম, প্রণয়, বিবাহ সবই জটিল সম্পর্কের আবর্তে ঘূর্ণায়মান!
জানেন কী দেবী সরস্বতী আসলে কে? দেবী সরস্বতীর জন্ম, প্রণয়, বিবাহ সবই জটিল সম্পর্কের আবর্তে ঘূর্ণায়মান! সরস্বতীর জন্ম বৃত্তান্ত
প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্টান বা বাড়িতে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর পুজো হয়ে থাকে। কেউ সরস্বতীর মূর্তি পূজা করেন, কেউবা ঘটে। মা সরস্বতীর যে মূর্তি আমরা দেখি, তা হলো দেবী শ্বেতবসনা, এক হাতে বীণা, অন্য হাতে বরাভয় মুদ্রা, দেবীর পাদপদ্মে রাজহংস।
ভারতীয় পুরাণ ও সংস্কৃতিতে দেবী সরস্বতীর বহুমাত্রিক রূপ রয়েছে। আদিতে সরস্বতী ছিলেন উত্তর ভারতের সপ্তনদীর অন্যতম সরস্বতী নদীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। পরবর্তীকালে তিনি যে কীভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির আরাধ্যা দেবী হয়ে উঠলেন, তা খুবই বিষ্ময়কর।
সনাতন হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পুরাণে সরস্বতী উৎস বা আবির্ভাব সম্পর্কে নানা কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ কাহিনী অনুসারে দেবী সরস্বতী ভগবান বিষ্ণু বা নারায়ণের স্ত্রী। পদ্মপুরাণে তিনি দক্ষকন্যা এবং কশ্যপ মুনির স্ত্রী। শিব পুরাণ আর স্কন্ধপুরাণ মতে সরস্বতী আবার ভগবান শিবের স্ত্রী। ঋগ্বেদ পরবর্তী হিন্দু শাস্ত্রে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই তিন দেবতার স্ত্রী রূপে সরস্বতীকে বর্ণিত করা হলেও, অধিক প্রচলিত বিশ্বাস তিনি নারায়ণ পত্নী।
আরো পড়ুনঃ সরস্বতী পুজোর আগে কুল খায় না কেন ছাত্র-ছাত্রীরা?
দীর্ঘকাল পরে রচিত ‘মৎস্যপুরাণ’ অনুসারে, পরমাত্মার মুখনিঃসৃত শক্তিগুলির মধ্যে সরস্বতী সর্বশ্রেষ্ঠা । তিনি রূপে দেবীর ন্যায় পরমা সুন্দরী, মহাশ্বেতা (যার সর্বাঙ্গ শ্বেত বর্ণের) ও বীণাবাদিনী।
শুধু সনাতন হিন্দু ধর্মেই নয়, বৌদ্ধ ধর্মেও মা সরস্বতীর উল্লেখ রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে সরস্বতীর রূপ ও অবয়বে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বৌদ্ধ সাধনমালায় দ্বিভুজা সরস্বতীর ৪ প্রকার ধ্যান রয়েছে, ‘মহাসরস্বতী’, ‘বজ্রবীণা সরস্বতী’, ‘বজ্রসারদা‘ ও ‘আর্যা সরস্বতী’।
মহাসরস্বতী দ্বিভুজা। তিনি শুভ্র বসনা, দেবীর ডান হাতে বরদমুদ্রা, বাম হাতে সনাল শ্বেত পদ্ম, শ্বেত পদ্মের উপর দেবী আসীন। বজ্রবীণা সরস্বতীও দ্বিভুজা, শ্বেতবর্ণা আর দুই হাতে বীণা ধরে আছেন। মহাসরস্বতীর সঙ্গে বজ্রবীণা সরস্বতীর অনেকটাই মিল দেখা যায়। বজ্রসারদা সরস্বতীও দ্বিভুজা, পদ্মাসীনা এবং ত্রিনেত্রা; এক হাতে পদ্ম অন্য হাতে পুস্তক। আর্যা সরস্বতী ষোড়শী বালিকার মত উদ্ভিন্নযৌবনা, শ্বেতবর্ণা। ডানহাতে রক্ত পদ্ম ও বাম হাতে সনাল পদ্ম এবং প্রজ্ঞাপারমিতা পুস্তক।
আরো পড়ুনঃ কয়েক হাজার বছর ধরে জাপানে নিষ্ঠাভরে পূজিত হচ্ছেন হিন্দু দেবী সরস্বতী!
জৈন ধর্মেরও অন্যতম একজন প্রধান দেবী সরস্বতী। জৈন ধর্মে সরস্বতীকে শ্রুতদেবী নাম অভিহিত করা হয়। সনাতন হিন্দু ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে দেবী সরস্বতী বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও স্থান করে নিয়েছেন। অবয়ব ও গঠনে কিছু পার্থক্য থাকলেও, সব ধর্মেই সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী রূপেই দেখা যায়।
ভারতবর্ষের বাইরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা হয়। চিনে সরস্বতী ‘তিয়েন মু’ এবং জাপানে ‘বেনতেন’ নামে পরিচিত। মায়ানমারে ত্রিপিটক রক্ষার দেবী হলেন সরস্বতী। মুসলিম প্রধান ইন্দোনেশিয়াতেও দেবী সরস্বতী পূজিত হন। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে রয়েছে মা সরস্বতীর সুদৃশ্য মন্দির। এছাড়া আমেরিকায় ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের সামনে স্থাপন করা হয়েছে মা সরস্বতীর সুদৃশ্য মূর্তি। রাশিয়ার লেনিংরাদ মিউজিয়ামেও দেবী সরস্বতীর একটি মূর্তি পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুনঃ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দেবী সরস্বতীর সুদৃশ্য মন্দির!