শ্রীকৃষ্ণের বিচারে কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে প্রকৃত দানবীর?
শ্রীকৃষ্ণের বিচারে কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে প্রকৃত দানবীর?
নিজের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যিনি প্রাণরক্ষাকারী কবচ-কুণ্ডল দান করতে দ্বিধা করেননি, তিনি হলেন কর্ণ। দাতা কর্ণ হিসেবেই তিনি বেশী পরিচিত। সমগ্র মহাভারত খুঁজেও এমন দানবীর আর দেখতে পাওয়া যায়না।
কর্ণকে দানবীর আখ্যা দেয়ায় একবার অর্জুন বেশ ক্ষুব্ধ হন। তিনি পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করেন, কেন শুধুমাত্র কর্ণকেই দাতা হিসেবে মহিমান্বিত করা হয়। তিনি নিজেও যে গরীব-দুঃখীকে দান করেন, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
আরো পড়ুনঃ জানুন মহাভারতের অজানা চরিত্র আহিল্যাবতী সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য!
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন অর্জুনকে একটি স্বর্ণের পাহাড়ে নিয়ে যান। তারপর অর্জুনকে বলেন, হে অর্জুন, এই স্বর্ণসমৃদ্ধ পাহাড়ের সকল স্বর্ণ সমস্ত গ্রামবাসীদের মধ্যে ভাগ করে দাও। খেয়াল রাখবে যেন একটি স্বর্ণও অবশিষ্ট না থাকে।
অর্জুন তখন পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে সবাইকে জানালেন, তিনি স্বর্ণ বিলি-বন্টন করবেন। অর্জুনের ঘোষণা শুনে সবাই সেই পাহাড়ের সামনে এসে উপস্থিত হলো। দুদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি স্বর্ণ বিলি করলেন। কিন্তু তখনও তিনি পাহাড়ের বেশীরভাগ খুঁড়ে উঠতে পারেননি। অথচ গ্রামবাসী তখনও অপেক্ষা করে আছে।
ক্লান্ত-বিধ্বস্ত অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, হে কৃষ্ণ, বিশ্রাম না করে আমি আর পারছিনা। পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ তখন কর্ণকে ডেকে পাঠান। কর্ণকেও একটি স্বর্ণের পাহাড় দেখিয়ে তিনি গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বর্ণ বিলি করতে বলেন। কর্ণ বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে গ্রামবাসীদের বললেন, এই স্বর্ণের পাহাড়টা আপনাদের। তারপর তিনি সেখান থেকে চলে যান।
আরো পড়ুনঃ কেরালার যে মন্দিরে পূজিত হন মহাভারতের শকুনি মামা!
হতভম্ব অর্জুন ভাবতে থাকেন যে তাঁর মাথায় কেন এমন চিন্তা এল না। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে বলেন, এজন্যই কর্ণ দানবীর। অর্জুন স্বর্ণ বিলি করেছেন কিন্তু কাকে কতোটা দেবেন সেই সিদ্ধান্ত নিজের হাতে রেখেছেন। স্বর্ণ বন্টনের সময় গ্রামবাসীর জয়ধ্বনিতে আত্ম-তৃপ্তি লাভ করেছেন। কিন্তু দাতা কর্ণ কোনও কিছুর প্রত্যাশা না করেই সম্পূর্ণ ভাবে দান করতে পারেন। তাঁর দানের পেছনে প্রতিদানে কিছু পাওয়ার কোনওরকম প্রত্যাশা থাকে না। সেই কারণেই তিনি দানবীর।