আগামীকাল রাধাষ্টমী! জেনে নিন শ্রীরাধার জন্মকাহিনী! কেন পালন করা হয় রাধাষ্টমী?
রাধাষ্টমী | রাধাষ্টমী ২০২০ | ২০২০ রাধাষ্টমী | রাধাষ্টমী কেন পালন করা হয় | রাধাষ্টমী পালন করলে কী ফল লাভ হয় | রাধাষ্টমী ২০২০ কবে | শ্রীরাধার জন্মকাহিনী |
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালনের কয়েকদিন পরই পালিত হয় শ্রীরাধিকার জন্মতিথি। ধারণা করা হয় ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীরাধার জন্ম হয়েছিল। সনাতন ধর্মানুসারীরা এই দিনটিকে রাধাষ্টমী হিসেবে পালন করেন।
কথিত আছে, একসময় সূর্যদেব পৃথিবী ভ্রমণ করতে আসেন। সেই সময় পৃথিবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি মন্দর পর্বতের গুহায় গভীর তপস্যায় মগ্ন হন। সূর্যদেব দিনের পর দিন তপস্যায় রত থাকায় পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। স্বর্গের দেবতারা তখন সৃষ্টি রক্ষার জন্য শ্রীহরির শরণাপন্ন হন। তখন স্বর্গের দেবতারা ভীত হয়ে শ্রীহরির কাছে সাহায্যের জন্য যান। শ্রীহরি সূর্যের সামনে উপস্থিত হলে সূর্যদেব খুব আনন্দিত হন।
আরো পড়ুনঃ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিখ্যাত ৮টি কৃষ্ণ মন্দির দর্শন করুন
সূর্যদেব বলেন আপনার দর্শন পেয়ে আমার তপস্যা সার্থক হলো। শ্রীহরি তাকে বর দিতে চাইলে, সূর্যদেব বলেন আমাকে এমন একটি গুণবতী কন্যার বর প্রদান করুন যার কাছে আপনি চিরকাল বশীভূত থাকবেন।
শ্রীহরি তথাস্ত বলে তাই বর দিয়েছিলেন। শ্রীহরি বলেছিলেন পৃথিবীর ভার লাঘবের জন্য আমি বৃন্দাবনের নন্দালয়ে জন্মগ্রহণ করব। তুমি সেখানে বৃষভানু রাজা হয়ে জন্মাবে। শ্রীমতি রাধা তোমার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করবে। এই ত্রিলোকে আমি একমাত্র শ্রী রাধিকারই বশীভূত থাকবো। রাধা ও আমার মধ্যে কোনো প্রভেদ থাকবে না। আমি সবাইকে আকর্ষণ করি কিন্তু একমাত্র রাধিকাই আমাকে আকর্ষণ করবে।
এরপর শ্রীহরি নন্দালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সূর্যদেব বৈশ্যকুলে জন্মগ্রহণ করে বৃষভানু রাজা হলেন এবং গোপকন্যা কীর্তিদার সঙ্গে তার বিবাহ হল। তারপর যথাকালে ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথিতে ধরিত্রীকে পবিত্র করে কীর্তিদার গর্ভে শ্রীমতি রাধারানী জন্মগ্রহণ করেন। এই রাধারানীর আবির্ভাব তিথিই রাধাষ্টমী নামে পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ইতিহাস
অন্য এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেকালে যমুনা নদী বর্ষাণার রাভেল স্থানটির পাশ দিয়ে বয়ে যেত। একদিন রাজা বৃষভানু নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখলেন, হাজার সূর্যের আলোর ন্যায় জ্যোতির্ময় এক সোনার পদ্ম ঠিক যমুনা নদীর মাঝখানে ফুটে আছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি ছোট শিশুকন্যা। তারপর ভগবান ব্রহ্মা এসে বিস্মিত রাজাকে জানালেন যে রাজা বৃষভানু ও তাঁর পত্নী কীর্তিদা পূর্বজন্মে ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তার ফলস্বরূপই এই জন্মে রাজা স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যারূপে পেয়েছেন।
এরপর রাজা বৃষভানু সেই শিশুকন্যাকে নিয়ে এসে তার পত্নী কীর্তিদার হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু তারা দেখলেন শিশুটি কিছুতেই চোখ খুলছে না। তারা ভাবলেন শিশুটি বোধহয় অন্ধ! তখন নারদমুনি রাজা বৃষভানুর কাছে এসে রাজাকে শিশুটির জন্মের জন্য আনন্দের উৎসব করতে বললেন।
নারদমুনীর কথা অনুযায়ী রাজা বৃষভানু উৎসবের আয়োজন করলেন। সেই উৎসবে নন্দ মহারাজ শিশু কৃষ্ণসহ সপরিবারে এসেছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানে শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারাণীর দিকে এগিয়ে এলেন, সেই মুহুর্তে রাধারাণী চোখ খুলে প্রথমে দেখলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। বৃন্দাবনের নিকটবর্তী বর্ষাণা এলাকার অন্তর্গত পবিত্র রাভেল নামক জায়গায় রাধারাণী আবির্ভূত হয়েছিলেন।
আরো পড়ুনঃ সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ১০ হিন্দু মন্দির
রাধাষ্টমী ব্রত পালন প্রসঙ্গে ভগবত ও পুরাণে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি একবারের জন্যও এই ব্রত পালন করেন তার কোটি জন্মের ব্রহ্ম হত্যার মত মহাপাপ বিনষ্ট হয়। শত শত একাদশী ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় রাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার শতাধিক ফল লাভ হয়ে থাকে।
পুরাকালে লীলাবতী নামে এক পতিতা বাস করতো। নগর ঘুরতে এসে সে দেখে সুসজ্জিত এক মন্দিরে মহাধুমধাম করে রাধা রানীর পূজা করা হচ্ছিল। সে এগিয়ে গিয়ে ব্রতীদের জিজ্ঞাসা করে সেখানে কিসের উৎসব পালিত হচ্ছে। ব্রতীরা রাধা মহারানীর আবির্ভাব তিথি উপলক্ষে রাধাষ্টমী ব্রত পালনের কথা ও তার মহাফল সব সবিস্তারে তাকে বলে। সেই পতিতারও এই ব্রত পালনের ইচ্ছে হয়, সেও অন্য ব্রতীদের সাথে রাধাষ্টমী পালন করে।
পরদিন সর্প দংশনে তার মৃত্যু হয়। যমদূতেরা ওই পতিতাকে নিয়ে যমলোকে যাত্ৰা করলে সেখানে শ্রী হরির লোকেরা উপস্থিত হয়ে তাকে বন্ধন মুক্ত করে বৈকুণ্ঠ লোকে নিয়ে যায়। এই ভাবে ওই লীলাবতী নামে পতিতা নারীও রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে সর্বপাপ মুক্ত হয়েছিলেন।