উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
উৎপন্না একাদশী, যা “উৎপন্না” নামে পরিচিত, হিন্দু ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে উদযাপিত হয় এবং এটি কৃষ্ণের ভক্তদের জন্য একটি মহান তিথি। উৎপন্না একাদশী পালনের মাধ্যমে ভক্তরা অনেক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক লাভ অর্জন করেন।
উৎপন্না একাদশী ২০২৪ উপোস ও পারণের সময়সূচী
তারিখ | বার | একাদশী | পারণের সময়সূচি (পরদিন) |
---|---|---|---|
২৭ নভেম্বর, ২০২৪ | বুধবার | উৎপন্না একাদশী (কৃষ্ণপক্ষ) | ০৬:২১-০৬:৫৬ |
উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য
অর্জুন বললেন হে দেব! অগ্রহায়ণের পুণ্যপ্রদায়ী কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে কেন ‘উৎপন্না’ বলা হয় এবং কি জন্যই বা এই একাদশী পরম পবিত্র ও দেবতাদেরও প্রিয়, তা জানতে ইচ্ছা করি। আপনি কৃপা করে আমাকে তা বলুন।
শ্রীভগবান বললেন-হে পৃথাপুত্র! পূর্বে সত্যযুগে ‘মুর’ নামে এক দানব ছিল। অদ্ভুত আকৃতিবিশিষ্ট সেই দানবের স্বভাব ছিল অত্যন্ত কোপন। সে দেবতাদেরও ভীতিপ্রদ ছিল। যুদ্ধে দেবতাদের এমনকি স্বর্গরাজ ইন্দ্রকে পর্যন্ত পরাজিত করে স্বর্গ থেকে বিতারিত করেছিল।এইভাবে দেবতারাপৃথিবীতে বিচরণ করতে বাধ্য হয়েছিল।
.
তখন দেবতারা মহাদেবের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্ত দু:খ সবিস্তারে জানালেন। শুনে মহাদেব বললেন-হেদেবরাজ! যেখানে শরণাগত বৎসল জগন্নাথ, গরুধ্বজ বিরাজ করছেন, তোমরা সেখানে যাও। তিনি আশ্রিতদের পরিত্রাণকারী। তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের মঙ্গল বিধান করবেন।
দেবাদি দেবের কথামতো দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদের নিয়ে ক্ষীরসমুদ্রের তীরে গমন করলেন। জলে শায়িত শ্রীবিষ্ণুকে দর্শ করে দেবতারা হাতজোড়করে তাঁর স্তব করতে লাগলেন। স্তুতির মাধ্যমে নিজ নিজ দৈন্য ও দু:খের কথা তাঁরা ভগবানকে জানালেন।
ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান নারায়ণ বললেন-হে ইন্দ্র! সেই মুর দানব কি রকম, সে কেমন শক্তিশালী, তা আমায় বল। ইন্দ্র বললেন- হে ভগবান! প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙ্ঘা নামে এক অতি পরাক্রমী অসুর ছিল। তারই পুত্র সেই ‘মুর’ অত্যন্ত বলশালী, ভীষণউৎকট ও দেবতাদেরও ভয় উৎপাদনকারী। সে চন্দ্রাবতী নামে এক পুরীতে বাস করে।
.
স্বর্গ থেকে আমাদের বিতাড়িত করে তার স্বাজাতি কাউকেরাজা, কাউকে অন্যান্য দিকপালরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এখন সে দেবলোক সম্পূর্ণ অধিকার করেছে। তার প্রবল প্রতাপে আজ আমরা প্রথিবীতেবিচরণ করছি। ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান দেবদ্রোহীদের প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। তিনি দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রবতী পুরীতে গেলেন।
সেই দৈত্যরাজ শ্রীনারায়ণকে দর্শন করে পুন: পুন: গর্জন করতে লাগল। দেবতা ও অসুরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে ঘেল। তখন যুদ্ধক্ষেত্রেশ্রীনারায়ণকে একা দেখে সেই দানব তাঁকে ‘দাঁড়াও দাঁড়াও’ বলতে লাগল।
শ্রীভগবানও ক্রোধে গর্জন করে অর্জুন বললেন হে দেব! অগ্রহায়ণের পুণ্যপ্রদায়ী কৃষ্ণপক্ষের একাদশীকে কেন ‘উৎপন্না’ বলা হয় এবং কি জন্যই বা এই একাদশী পরম পবিত্র ও দেবতাদেরও প্রিয়, তা জানতে ইচ্ছা করি। আপনি কৃপা করে আমাকে তা বলুন।
শ্রীভগবান বললেন-হে পৃথাপুত্র! পূর্বে সত্যযুগে ‘মুর’ নামে এক দানব ছিল। অদ্ভুত আকৃতিবিশিষ্ট সেই দানবের স্বভাব ছিল অত্যন্ত কোপন। সে দেবতাদেরও ভীতিপ্রদ ছিল। যুদ্ধে দেবতাদের এমনকি স্বর্গরাজ ইন্দ্রকে পর্যন্ত পরাজিত করে স্বর্গ থেকে বিতারিত করেছিল।এইভাবে দেবতারা পৃথিবীতে বিচরণ করতে বাধ্য হয়েছিল।
.
তখন দেবতারা মহাদেবের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্ত দু:খ সবিস্তারে জানালেন। শুনে মহাদেব বললেন – হে দেবরাজ! যেখানে শরণাগত বৎসল জগন্নাথ, গরুধ্বজ বিরাজ করছেন, তোমরা সেখানে যাও। তিনি আশ্রিতদের পরিত্রাণকারী। তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের মঙ্গল বিধান করবেন।
দেবাদি দেবের কথামতো দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদের নিয়ে ক্ষীরসমুদ্রের তীরে গমন করলেন। জলে শায়িত শ্রীবিষ্ণুকে দর্শন করে দেবতারা হাতজোড়করে তাঁর স্তব করতে লাগলেন। স্তুতির মাধ্যমে নিজ নিজ দৈন্য ও দু:খের কথা তাঁরা ভগবানকে জানালেন।
ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান নারায়ণ বললেন – হে ইন্দ্র! সেই মুর দানব কি রকম, সে কেমন শক্তিশালী, তা আমায় বল।
ইন্দ্র বললেন- হে ভগবান! প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙ্ঘা নামে এক অতি পরাক্রমী অসুর ছিল। তারই পুত্র সেই ‘মুর’ অত্যন্ত বলশালী, ভীষণউৎকট ও দেবতাদেরও ভয় উৎপাদনকারী। সে চন্দ্রাবতী নামে এক পুরীতে বাস করে।
.
স্বর্গ থেকে আমাদের বিতাড়িত করে তার স্বজাতি কাউকে রাজা, কাউকে অন্যান্য দিকপালরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এখন সে দেবলোক সম্পূর্ণ অধিকার করেছে। তার প্রবল প্রতাপে আজ আমরা পৃথিবীতে বিচরণ করছি।
ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান দেবদ্রোহীদের প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। তিনি দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রবতী পুরীতে গেলেন। সেই দৈত্যরাজ শ্রীনারায়ণকে দর্শন করে পুন: পুন: গর্জন করতে লাগল। দেবতা ও অসুরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
তখন যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রীনারায়ণকে একা দেখে সেই দানব তাঁকে ‘দাঁড়াও দাঁড়াও’ বলতে লাগল। শ্রীভগবানও ক্রোধে গর্জন করে বললেন-রে দুরাচার দানব আমার বাহুবল দেখ। এই বলে অসুরপক্ষীয় সমস্ত যোদ্ধাদের দিব্য বাণের আঘাতে নিহত করতে লাগলেন। তখন তারা প্রাণভয়ে নানা দিকে পালাতে লাগল। সেই সময় নারায়ণ দৈত্য সৈন্যদের মধ্যে সুদর্শন চক্র নিক্ষেপ করলেন। ফলে সমস্ত সৈন্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। একমাত্র মুর অসুরই জীবিত ছিল।
.
সে অস্ত্র যুদ্ধে নারায়ণকেও পরাজিত করল। তখন নারায়ণ দৈত্যের সাথে বাহুযুদ্ধে লিপ্ত হলেন। এইভাবে দেবতাদের হিসাবে এক হাজার বছর যুদ্ধ করেও ভগবান তাকে পরাজিত করতে পারলেন না।
তখন শ্রীহরি বিশেষ চিন্তান্বিত হয়ে বদরিকা আশ্রমে গমন করলেন। সেখানে সিংহাবতী নামে একটি গুহা আছে। এই গুহাটি এক-দ্বার বিশিষ্ট এবং বারো যোজন অর্থাৎ ৮৬ মাইল বিস্তিৃত। ভগবান বিষ্ণু সেই গুহার মধ্যে শয়ন করলেন।
সেই দৈত্যও তার পিছন পিছন ধাবিত হয়ে গুহার ভিতরে প্রবেশ করল। সে বিষ্ণুকে নিদ্রিত বুঝতে পারল। অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ভাবতে লাগল – আমার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিষ্ণু এখানে গোপনে শুয়ে আছে। এখন আমি তাকে অবশ্যই বধ করব।
দানবের এইরকম চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীবিষ্ণুর শরীর থেকে একটি কন্যা উৎপন্ন হল। এই কন্যাই ‘উৎপন্না’ একাদশী। তিনি রূপবতী, সৌভাগ্যশালিনী, দিব্য অস্ত্র-শস্ত্র ধারিনী ও বিষ্ণু তেজসম্ভুতা বলে মহাপরাক্রমশালী ছিলেন।
দৈত্যরাজ সেই স্ত্রীরূপিনী দেবীর সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু করল। কিছুকাল যুদ্ধের পর দেবীর দিব্য তেজে অসুর ভস্মীভূত হয়ে গেল।
তারপর বিষ্ণু জেগে উঠে সেই ভস্মীভূত দানবকে দেখে বিস্মিত হলেন। এক দিব্যকন্যাকে তাঁর পাশে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। বিষ্ণু বললেন – হে মহাপরাক্রান্ত উগ্রমূর্তি! এই মুর দানবকে কে বধ করল? যিনি একে হত্যা করেছে তিনি নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় কর্ম করেছে।
সেই কন্যা বললেন – হে প্রভু! আমি আপনার শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছি। আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন এই দানব আপনাকে বধ করতে চেয়েছিল। তা দেখে আমি তাকে বধ করেছি। আপনাদের কৃপাতেই আমি তাকে বধ করতে পেরেছি।
একথা শুনে ভগবান বললেন – আমার পরাশক্তি তুমি একাদশীতে উৎপন্ন হয়েছ। তাই তোমার নাম হবে একাদশী। আমি এই ত্রিলোকে দেবতা ও ঋষিদের অনেক বর প্রদান করেছি। হে ভদ্রে! তুমিও তোমার মনমতো বর প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে তা প্রদান করব।
একাদশী বললেন – হে দেবেশ! ত্রিভুবনের সর্বত্র আপনার কৃপায় সর্ববিঘ্ননাশিনী ও সর্বদায়িনী রূপে যেন পরম পুজ্য হতে পারি, এ বিধান করুন। আপনার প্রতি ভক্তিবশত: যারা শ্রদ্ধাসহকারে আমার ব্রত-উপবাস করবে, তাদের সর্বসিদ্ভি লাভ হবে-এই বর প্রদান করুন।
বিষ্ণু বললেন-হে কল্যাণী! তাই হোক। ‘উৎপন্না’ নামে প্রসিদ্ধ তোমার ব্রত পালনকারীর সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুমি তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণকরবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তোমাকে আমার শক্তি বলে মনে করি। তাই তোমার ব্রত পালনকারী সকলে আমারই পূজা করবে। এর ফলে তারা মুক্তি লাভ করবে। তুমি হরিপ্রিয়া নামে জগতে বিখ্যাত হবে। তুমি ব্রতপালনকারীর শ্রত্রুবিনাশ, পরমগতি দান এবং সর্বসিদ্ধি প্রদান করতে সমর্থ হবে।
ভগবান বিষ্ণু এইভাবে ‘উৎপন্না’ একাদশীকে বরদান করে অন্তর্হিত হলেন। সমস্ত ব্রতকারী দিবারাত্রি ভক্তিপরায়ণ হয়ে এই উৎপন্না একদশীর উৎপত্তির কথা শ্রবণ-কীর্তন করলে শ্রীহরির আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবেন।
উৎপন্না একাদশী কেন পালন করা হয়
- শুদ্ধতা ও সাধনা: উৎপন্না একাদশী একটি পবিত্র তিথি, যা শুদ্ধতা এবং সাধনার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই দিনে ভক্তরা উপবাস পালন করেন এবং রাতভর জাগরণ করেন। এটি আত্মশুদ্ধির একটি সুযোগ, যেখানে ভক্তরা তাদের মন এবং চিত্তকে পরিষ্কার করতে পারেন।
- কৃষ্ণের মহিমা: উৎপন্না একাদশী দিনটি ভগবান কৃষ্ণের প্রতি নিবেদিত। এই দিনে কৃষ্ণের পুজা করা হয়, এবং ভক্তরা তাঁর প্রতি বিশেষ প্রার্থনা করেন। বিশ্বাস করা হয় যে, কৃষ্ণ এই দিনে ভক্তদের সমস্ত দুঃখ ও সমস্যার সমাধান করেন।
- পুণ্যের সঞ্চয়: উৎপন্না একাদশীতে উপবাস ও সাধনা করার মাধ্যমে ভক্তরা প্রচুর পুণ্য অর্জন করেন। এই দিনটি ব্রহ্মহত্যা ও অন্যান্য পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ দেয়। উত্পন্না একাদশী উপবাসের ফলে ভক্তরা স্বর্গে যাওয়ার সুযোগ পান, যা অন্যান্য যজ্ঞের ফলের চেয়ে সহজ।
- দান ও সেবা: এই দিনে দানশীলতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ভক্তরা দান করলে তাদের পুণ্য বৃদ্ধি পায়। খাদ্য, অর্থ, এবং অন্যান্য সামগ্রীর দান করা হয়, যা সমাজের উন্নতি ও দরিদ্রদের সাহায্য করে।
- আধ্যাত্মিক উন্নতি: উৎপন্না একাদশী ভক্তদের আধ্যাত্মিকতার উন্নতি সাধনে সহায়ক। উপবাস ও মন্ত্র জপের মাধ্যমে আত্মসংযম এবং আত্মপ্রত্যয় বৃদ্ধি পায়। এই দিনটি সাধনার মাধ্যমে এক নতুন জীবনের সূচনা করতে সাহায্য করে।
উৎপন্না একাদশী একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তিথি, যা ভক্তদের জন্য এক বিশেষ উপলক্ষ। এটি আত্মশুদ্ধি, কৃষ্ণভক্তি, এবং পুণ্যের সঞ্চয়ের সুযোগ দেয়। উৎপন্না একাদশী পালনের মাধ্যমে ভক্তরা নিজেদের এবং তাঁদের পূর্বপুরুষদের জন্য অশেষ পুণ্য অর্জন করতে পারেন, যা তাদের জীবনে সুখ, শান্তি, এবং সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। তাই উৎপন্না একাদশী পালন করা আমাদের সকলের জন্য একটি মহৎ সুযোগ।