Videosপৌরানিক কাহিনীমহাভারত

কেন নারী রূপ ধারণ করে অর্জুনপুত্র ইরাবানকে বিয়ে করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ?

কেন নারী রূপ ধারণ করে অর্জুনপুত্র ইরাবানকে বিয়ে করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ?

প্রথমে নারী রূপ ধারণ করে বিয়ে, তারপর বিধবার মতো দিন যাপন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন এক পুরুষ। আর কেউ নয়, মহাভারতের এই চরিত্রের নাম শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে?

পাণ্ডব,কৌরব, কৃষ্ণ, দ্রৌপদী, কর্ণের মত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলির কথা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু তা ছাড়াও যে আরও কত চরিত্র ছড়িয়ে রয়েছে এই মহাকাব্যের পাতায় পাতায় এবং তাঁরা যে মহাভারতের গতিপথে কত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আরো পড়ুনঃ জানলে অবাক হবেন পূর্বজন্মে মহাবীর কর্ণ ছিলেন রাক্ষস, নাম ছিল দাম্বোদভব

এমনই একজন চরিত্র নিয়ে আজ আমরা কথা বলব। তার নাম আরাবন অথবা ইরাবন। ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের পুত্র ছিলেন রূপান্তরকামী আরাবন। অর্জুন এবং নাগকন্যা উলুপির সন্তান ছিলেন তিনি। বাবার মতোই তিনি ছিলেন শস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। পাণ্ডবদের হয় কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে যোগ দেন আরাবন।

নবম শতকের মহাভারতের তামিল অনুবাদে পাওয়া যায় কালাপ্পালি নামে এক প্রথার উল্লেখ। এই প্রথা অনুসারে যুদ্ধে কোনও বীরপুরুষ যদি দেবী কালীর সামনে নিজেকে বলি দেন, তো যুদ্ধে সেই পক্ষের জয় অবশ্যম্ভাবী। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের জয় সুনিশ্চিত করতে নিজেকে উত্‍সর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন আরাবন। রূপান্তরকামী আরাবন শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে তিনটি বর লাভ করেন। একটি হল যুদ্ধে বীরের মৃত্যু বরণ করা, দ্বিতীয়টি হল ১৮ দিনের যুদ্ধ পুরোটা দেখার সৌভাগ্য লাভ করা এবং তৃতীয়টি হল মৃত্যুর পর তাঁকে দাহ করার প্রতিশ্রুতি।

সেকালের রীতি অনুযায়ী অবিবাহিতদের মৃত্যুর পর দাহ না করে কবর দেওয়া হত। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় আরাবন ছিলেন অবিবাহিত। তাই আগেভাগেই নিজের মরদেহ দাহের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন আরাবন। কিন্তু যিনি নিজেকে মা কালীর কাছে বলি দেবেন, মাত্র একদিনের জন্য তাঁকে কোন নারী বিয়ে করবেন?

আরো পড়ুনঃ ভারতের এই গুহায় বসে মহাভারত লিখেছিলেন ব্যাসদেব! আপনিও যেতে পারেন সেখানে!

অথচ শ্রীকৃষ্ণের কাছে তাঁর দাবি ছিল, তাঁর শরীর যেন দাহ করা হয়। মুশকিল আসান করতে মাঠে নামেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তিনি নিজে নারীর শরীর ধারণ করেন। মোহিনী নাম নিয়ে আরাবনকে বিয়ে করেন। আরাবনের মূত্যুর পর শ্রীকৃষ্ণ বিধবার বেশ ধারণ করে শোক পালন করেন। পরের দিন আবার নিজের রূপ ধারণ করেন।

তামিলনাড়ুতে এখনো আরাবন ও মোহিনীর পুজো হয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ যতদিন চলেছিল, সেই ১৮ দিন ধরে সেখানে চলে উত্‍সব। তামিস মাস সিট্টিরাই-তে এই উত্‍সব হয়। স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী, রূপান্তরকামীরা এই উত্‍সবের মধ্যে দিয়ে আরাবনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং আরাবনের উত্‍সর্গের পরে রূপন্তরকামীরা বৈধব্যবেশ ধারণ করে শোক পালন করেন।

আরো পড়ুনঃ একজন নারী কী গুরু হতে পারেন? নারীরা কী দীক্ষা দান করতে পারেন?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!