মন্দির

প্রাম্বানান মন্দির: মুসলিম প্রধান ইন্দোনেশিয়ার জাভায় হাজার বছরের পুরনো শিব মন্দির

প্রাম্বানান মন্দিরের আরেকটি আকর্ষণ হলো, মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫শ থেকে ১৬শ শতাব্দীতে ইন্দোনেশিয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

মুসলিম প্রধান ইন্দোনেশিয়ার জাভায় হাজার বছরের পুরনো শিব মন্দির ‘প্রাম্বানান মন্দির’

জনসংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। তবে ইন্দোনেশিয়ার একটি হিন্দু ইতিহাস রয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অন্যান্য দেশের মুসলিমদের থেকে ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা একটু আলাদা। তাঁরা তাদের হিন্দু ইতিহাস নিয়ে ভীষণ গর্বিত এবং সেই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারেও সচেষ্ট। তাঁর প্রমাণ পাওয়া ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন কার্যক্রমে। ইন্দোনেশিয়ার সরকারী বিমান সংস্থার নাম গারুদা। যা বিষ্ণুর বাহন গরুড় পাখি থেকে নেয়া হয়েছে। আমেরিকায় ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাসের সামনে ইন্দোনেশিয়ার সরকারী অর্থে স্থাপন করা হয়েছে সুদৃশ্য সরস্বতী মূর্তি। এছাড়া সমগ্র ইন্দোনেশিয়া জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে হিন্দু স্থাপত্য ও ভাষ্কর্য।

গারুদা ইন্দোনেশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স
গারুদা ইন্দোনেশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় এয়ারলাইন্স

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে সবচেয়ে বেশী হিন্দু বসবাস করেন। এই দ্বীপের শতকরা ৮৪ ভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মানুসারী। এখানকার হিন্দু ধর্ম বালিনিজ হিন্দুইজম নামে বেশী পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ ৫১ শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান এবং কোথায় সতীর কোন অঙ্গ পড়েছিল জেনে নিন

ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে রয়েছে একটি বিখ্যাত মন্দির। যার নাম প্রাম্বানান মন্দির, স্থানীয়ভাবে এটি ‘লোরোজোঙ্গরাং’ নামেও পরিচিত। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম হিন্দু মন্দির। খ্রীস্টিয় নবম শতাব্দীতে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। হিন্দু ধর্মের ত্রিমূর্তি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিবকে উৎসর্গ করে এই মন্দিরটি তৈরী। এই মন্দিরটি দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মন্দির।

প্রাম্বানান মন্দির কমপ্লেক্স, জাভা, ইন্দোনেশিয়া
প্রাম্বানান মন্দির কমপ্লেক্স, জাভা, ইন্দোনেশিয়া

এটি হিন্দু স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ২৪০টি মন্দির নিয়ে এক সুবিশাল কমপ্লেক্স যা আম্বানান আর্কিওলজিক্যাল পার্কের অন্তর্গত। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো প্রাম্বানান মন্দিরকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে। ইউনেস্কোর মতে, The property is an outstanding religious complex, characteristic of Siva expression of the 10th Certury.

শৈলেন্দ্র রাজবংশের রাজত্বের স্বর্ণযুগে আনুমানিক ৮৫০ সালে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দির কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে ৩টি প্রধান মন্দির, যা ভগবান শিব, বিষ্ণু ও ব্রহ্মার উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এই ত্রিমূর্তি মন্দিরের সামনেই রয়েছে তিনটি বাহন মন্দির। অর্থাৎ বিষ্ণুর বাহন গরুড়, শিবের বাহন নন্দী এবং ব্রহ্মার বাহন হংসের মন্দির।

ত্রিমূর্তি ও বাহন মন্দিরগুলোর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে দুটি অর্পিত মন্দির। অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের চারটি প্রধান প্রবেশ দ্বারের ঠিক বাইরে রয়েছে চারটি ছোট কিলিং মন্দির। অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের চার কোণে রয়েছে চারটি ছোট পটক মন্দির। বাকি ২২৪টি মন্দির প্রাম্বানান মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতর ও বাহিরের অংশের মাঝ বরাবর চারদিকে সমকেন্দ্রিক বর্গাকারে সারিবদ্ধভাবে সাজানো। বাইরের সারি থেকে ভেতরের সারিইর মন্দিরগুলোর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪, ৫২, ৬০, ৬৮। মন্দির কমপ্লেক্সের একেবারে ভেতরের অংশে ৪৭ মিটার উচু কেন্দ্রীয় ভবনটি অবস্থিত। এখানেই ভগবান শিব পূজিত হন।

আরো পড়ুনঃ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দেবী সরস্বতীর সুদৃশ্য মন্দির!

প্রাম্বানান মন্দির কমপ্লেক্সটি তিনটি অংশে বিভক্ত। অভ্যন্তরীণ অংশে মোট আটটি প্রধান মন্দির এবং আটটি ছোট মন্দির রয়েছে। দ্বিতীয় অংশে আছে কয়েকশো ছোট মন্দির। এরপর রয়েছে কমপ্লেক্সের একেবারে বাইরের অংশটি।

হাজার বছরের পুরনো প্রাম্বানান মন্দির কমপ্লেক্সের অধিকাংশ মন্দিরই বর্তমানে নষ্ট হয়ে গেছে। এতদসত্ত্বেও এই মন্দিরের শৈল্পিক ও আধ্যাত্মিক মূল্য অতূলনীয়।

১৯৬১ সাল থেকে এই মন্দির কমপ্লেক্সে নিরবচ্ছিন্নভাবে ‘রামায়ণ-ব্যালে’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যেকোন স্টেজ শোয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড। ব্যালের কুশীলবদের বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মানুসারী।

প্রাম্বানান মন্দিরের আরেকটি আকর্ষণ হলো, মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫শ থেকে ১৬শ শতাব্দীতে ইন্দোনেশিয়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর পুজো সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই মন্দিরে ‘নিয়েপি’ (Nyepi) বা ‘নিরবতার দিন’ পালন করা হয়।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে শৈলেন্দ্র রাজবংশের প্রায় এক শতাব্দীর পর প্রাম্বানান মন্দির নির্মাণ হিন্দু সঞ্জয় রাজবংশের কেন্দ্রীয় জাভাতে ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রতীক। এই বৃহদায়তন হিন্দু মন্দির নির্দেশ করে যে মেদাঙ্গ রাজ্য মহাযান বৌদ্ধধর্ম থেকে শৈব হিন্দুধর্মে তার পৃষ্ঠপোষকতা স্থানান্তরিত করেছিল।

আরো পড়ুনঃ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কেন জগন্নাথ দেবের হাত নেই?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!