যুক্তরাজ্যের ১ম হিন্দু প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আসলে কে?
ব্রিটেনের প্রথম অ-খ্রিস্টান প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটেনের প্রথম হিন্দু প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী
কে এই ঋষি সুনাক?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে, এই প্রথম ব্রিটেনে একজন ব্রিটিশ এশিয়ান রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনকারী এমপি কমিটির প্রধান স্যার গ্রেম ব্রেডি নিশ্চিত করেছেন যে ঋষি সুনাকই হবেন দলের পরবর্তী নেতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার সন্ধ্যায় ঋষি সুনাক অনেকগুলো রেকর্ড ব্রেক করলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ব্রিটেনের বিংশ ও একবিংশ শতকের ইতিহাসে সবচেয়ে অল্পবয়সী প্রধানমন্ত্রী, রানি এলিজাবেথের জমানা শেষে প্রথম প্রধানমন্ত্রী, রাজা চার্লসের মাধ্যমে অভিষিক্ত হতে যাওয়া ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটেনের প্রথম অ-খ্রিস্টান প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটেনের প্রথম হিন্দু প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটেনের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ প্রধানমন্ত্রী।
এ বছরের মাঝামাঝি মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে পড়ে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ঋষি সুনাক।
কিন্তু তাকে হারিয়ে যিনি দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর গত সপ্তাহে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এর পরপরই আবারও নেতৃত্বের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মি. সুনাক। শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ না করায় ঋষি সুনাকই কনজারভেটিভ দলের নেতা এবং সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
গত মাসে সেপ্টেম্বরে নেতৃত্বের নির্বাচনে যিনি হেরে গিয়েছিলেন, পরের মাসেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি জিতে গেলেন।
ধারণা করা হচ্ছিল মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী এমপি পেনি মর্ডান্ট এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঋষি সুনাককে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু বরিস জনসন রোববার রাতেই জানিয়ে দেন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আর আজ (সোমবার) বেলা দুটোয় প্রার্থিতা ঘোষণার সর্বশেষ সময় পার হয়ে যাওয়ার ঠিক আগে মিজ মর্ডান্টও জানিয়ে দেন তিনি নেতা নির্বাচনের এই দৌড়ে যোগ দিচ্ছেন না।
গত মাসেই নেতৃত্বের নির্বাচনে যিনি হেরে গিয়েছিলেন পরের মাসেই দলের বিপুল সংখ্যক এমপির সমর্থন নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হলেন মাত্র ৪২ বছর বয়সী সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। শেষ পর্যন্ত সত্যিই ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে যাচ্ছেন ঋষি সুনাক।
সুনাক ১৯৮০ সালের ১২ মে ব্রিটেনের সাউদাম্পটন, হ্যাম্পশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা যশবীর সুনাক ও মা ঊষা সুনাক ভারতীয় পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত কেনিয়ান হিন্দু। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবা কেনিয়ার কলোনি এবং প্রটক্টোরেটে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন, এবং তার মা তাঙ্গানিকায় জন্মগ্রহণ করেন, যা পরে তানজানিয়ার অংশ হয়ে ওঠে। তার পিতামহ ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬০ এর দশকে পূর্ব আফ্রিকা থেকে তাদের পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন।
তাঁর পিতামহ, রামদাস সুনাক, ছিলেন গুজরানওয়ালা (বর্তমান পাকিস্তানে)। তিনি ১৯৩৫ সালে ক্লার্ক হিসাবে কাজ করার জন্য কেনিয়ার নাইরোবিতে চলে আসেন। ঋষির বাবা যশবীর ছিলেন একজন ডাক্তার ও মা ছিলেন ফার্মাসিস্ট।
মেধাবী ছাত্র সুনাক আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে এমবিএ করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুনাক ব্রিটেনের চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার (অর্থমন্ত্রী) হন। সুনাকের আর একটা পরিচয় হল, তিনি ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তির জামাতা। নারায়ণমূর্তির কন্যা অক্ষতার সঙ্গে তার আলাপ স্ট্যানফোর্ডেই, পরে তারা দু’জনে বিয়ে করেন।
রাজনৈতিক জীবনে ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড কেন্দ্র থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ‘লোকাল গভর্নমেন্ট’-এর প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০১৯ সালে বরিস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার গুরুত্ব আরও বাড়ে। এরপর সরাসরি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। বর্তমানে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টিতেও জনপ্রিয় মুখ তিনি। এদিকে তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
ঋষি সুনাকের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।