Featuredহিন্দু ধর্মের অজানা কাহিনী

হিন্দু ধর্মের ১০টি প্রতীক যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা

সনাতন ধর্মের পবিত্র চিহ্ন গুলো সম্পর্কে জেনে নিন এক ঝলকে

সনাতন হিন্দু ধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম। এই ধর্মের একক কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই। লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস বা প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ আখ্যা দেওয়া হয়। হিন্দু ধর্ম বিভিন্ন প্রতীকতায় সমৃদ্ধ। এই ধর্মে বিভিন্ন ধরণের প্রাচীন পবিত্র চিহ্ন রয়েছে যা দর্শন, শিক্ষা এবং দেবদেবীদের উপস্থাপন করে। সনাতন পন্ডিতের আজকের আয়োজন থেকে চলুন জেনে নিই, এমনই কয়েকটি পবিত্র প্রতীক এবং তার মহাজাগতিক ব্যাখা।

কালচক্র
কালচক্র

কালচক্র

কালচক্র যা ‘সময়ের চাকা’ বা ‘সময়ের বৃত্ত’ হিসেবে পরিচিত। কালচক্র চাকাটির আটটি মুখপাত্র যা সময়ের নির্দেশকে চিহ্নিত করে এবং প্রত্যেকেই কোনও দেবতার দ্বারা শাসিত হয় এবং একটি অনন্য গুণ রয়েছে। এই শক্তিশালী প্রতীক পৃথিবীর এবং এই গ্রহের সমস্ত মানুষকে নিরাময় এবং শান্তি দেয়। আমরা জটিল, সুন্দর নিদর্শনগুলি, তাদের পরিপূর্ণতা এবং অর্থগুলিতে সমৃদ্ধ প্রতীকগুলি দেখতে পাই।

ওম চিহ্ন
ওম চিহ্ন

ওম

এটি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় সংঘটনকারী ঈশ্বরের প্রতীক। ‘ওম’ শব্দটি তিন অক্ষরে অ, উ, এবং ম্ দ্বারা তৈরী। । অ এর অর্থ উৎপন্ন হওয়া, উ এর অর্থ উড়তে পারা বা বিকাশ, ম হলো মৌন হওয়া অর্থাৎ ব্রহ্মলীন হয়ে যাওয়া। ওম সম্পূর্ণ ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি একইসঙ্গে সৃষ্টির দ্যোতক। এই ধ্বনি বিশ্বের আদি ধ্বনি বলে মনে করে হিন্দু সনাতন ধর্ম। শাস্ত্র মতে যে কোনও মন্ত্র উচ্চারণের আগে এই ধ্বনি উচ্চারন করলে সেই মন্ত্রকে মহাজগতের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়।

গণেশ
গণেশ

গণেশ

প্রাক-বৈদিক ও বৈদিক যুগের দেবতাদের মধ্যে গণেশের গুণাবলি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু সেই গুণাবলি গণেশের উপর আরোপ করে পৃথক দেবতা রূপে তার পুজো প্রথম প্রসার লাভ করে গুপ্তযুগে, খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে হিন্দুধর্মের অন্যতম শাখা স্মার্ত সম্প্রদায়ের পাঁচ জন প্রধান দেবতার তালিকায় গণেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এছাড়া গাণপত্য নামে একটি পৃথক গণেশ-কেন্দ্রিক হিন্দু সম্প্রদায়েরও উদ্ভব ঘটে। এই সম্প্রদায়ে গণেশ সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে পূজিত হন।আর তখন থেকেই অর্থাৎ নবম খ্রিষ্টীয় সাল থেকে সকল মূর্তি পুজোর আগে গণেশের পুজো করা শুরু হয়।

বট গাছ
বট গাছ

বট গাছ

ঐতিহ্যগতভাবে মন্দিরের সামনে রোপণ করা, হিন্দু ধর্মের প্রতীক এবং ঐশ্বরিক স্রষ্টা ব্রহ্মাকে উপস্থাপন করে এবং এটি ভারতের অন্যতম পূজিত গাছ। বট গাছ ত্রিমূর্তির প্রতীক – ভগবান বিষ্ণু, শিব, ভগবান ব্রহ্মা হিসাবে বিশ্বাস করা হয়। এটি সমস্ত দিক থেকে এবং বহু শতাব্দী ধরে বহু শিকড় থেকে বেঁচে থাকার এবং বেড়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে; এটি বিশাল ছায়া ছড়িয়ে দেয় এবং বলা হয় যে শিব এবং ঋষিরা আলোকপাতের জন্য তাঁর ছায়ায় বসতেন। পুরাণ মতে বট গাছের কান্ডগুলিতে দেবতার আবাস। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বটবৃক্ষকে অমরত্বের বৃক্ষ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

শ্রীযন্ত্রম
শ্রীযন্ত্রম

শ্রীযন্ত্রম

এই যন্ত্রম যেমন সংসারে লক্ষ্মীশ্রী বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, একইসঙ্গে এই মহত্ত্বপূর্ণ যন্ত্রম পড়ার ঘরে রাখলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, মানসিক শক্তি বৃদ্ধি, একাগ্রতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে থাকে। এর আরেক নাম যন্ত্ররাজ। তবে এই যন্ত্র যে শুধু লক্ষ্মীলাভের সহায়ক এমনটাই নয়, এই যন্ত্রের সাহায্যে বিদ্যার স্থানকে বিশেষভাবে উন্নত করে বলে মনে করা হয়।

নটরাজ
নটরাজ

নটরাজ

কথিত আছে নৃত্য ও সঙ্গীত শিবের সৃষ্টি, তিনিই এই নৃত্যকলার প্রর্বতক। সহস্রনামে শিবের নর্তক ও নিত্যনর্ত নামদুটি পাওয়া যায়। পৌরাণিক যুগের থেকেই নৃত্য ও সঙ্গীতের সঙ্গে শিবের যোগ বিদ্যমান। শিব যখন ক্ষিপ্ত হন তখনই তার এই রূপ প্রকাশ্যে আসে৷ তাঁর মূর্তির মধ্যে ধ্যানমগ্ন অবস্থা বা মায়াসুরের পিঠে তাণ্ডবনৃত্যরত অবস্থার মূর্তি যা নটরাজ মূর্তি নামেই বেশি প্রচলিত।

মহাকাব্য অনুযায়ী, এই নটরাজই নৃত্যের প্রবর্তক৷ এর পাশাপাশিই সমগ্র বিশ্বই নটরাজের নৃত্যের স্থান৷ তবে, শুধুমাত্র তিনি তাণ্ডবনৃত্যই করতেন না, তিনি হলেন একজন পর্যবেক্ষকও৷ নটরাজ সমস্ত ধার্মিক কার্যকলাপের মিলিত রূপ৷

স্বস্তিক চিহ্ন
স্বস্তিক চিহ্ন

স্বস্তিক

এই চিহ্ন সৃষ্টি এবং জীবনের প্রতীক, তাই সূর্য দেবতার সঙ্গে স্বস্তিকের একধরনের সম্পর্ক টানতে চেয়েছেন অনেকেই। তবে সকল দিক এবং মত অনুসারেই স্বস্তিক শুভের চিহ্ন। হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের অনুসারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে প্রতীকটি। সংস্কৃত শব্দ স্বস্তিকা। সাধারণ অর্থে কল্যাণ বা মঙ্গল।

হাজার বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের অনুসারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রেখেছে প্রতীকটি। ১১ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এই চিহ্ন। ভারতীয় সংস্কৃতির সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক এই চিহ্ন। হিন্দু শাস্ত্র মতে, প্রাচীণ এই চিহ্ন দরজায় বা বাড়ির মূল প্রবেশ দ্বারে থাকা শুভ।

নাগ
নাগ

নাগ

সাপ বা নাগ ‘কুণ্ডলিনী শক্তি’ এবং মহাজাগতিক শক্তি। প্রাচীন কাল থেকেই, নাগ সর্প উপাসকদের গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, ভূগর্ভস্থ বা ‘পাটাল’ এর শাসক। সাপের প্রতীকী তাত্পর্যটি দুর্দান্ত বলে বিশ্বাস করা হয়। ‘নাগ’ এবং স্ত্রীলিঙ্গ ‘নাগিন’ উভয়ই পুস্তকে বহুলভাবে উপাসনা করা হয়।

পদ্ম ফুল
পদ্ম ফুল

পদ্ম ফুল

পদ্ম সংস্কৃতি এবং শিষ্টাচার এবং ভারতের জাতীয় ও পবিত্রতম প্রতীক। এটি সৃষ্টি, সৌন্দর্য ও সিদ্ধির প্রতীক। বিষ্ণু, ব্রহ্মা, লক্ষ্মী এবং চক্রের সঙ্গে এটি জড়িত। এর পুষ্পটি পবিত্রতা এবং অ-সংযুক্তির প্রতিশ্রুতি। এমনকি কাদায় শিকড় থাকলেও পদ্ম নিজে পরিষ্কার থাকে। হিন্দু ধর্মের ত্রিমূর্তির স্রষ্টা দেবতা ব্রহ্মা সর্বদা পদ্মের উপরে ধ্যান করেন এবং বিষ্ণু, গণেশ এবং পার্বতীর মতো বহু হিন্দু দেবদেবীদের হাতে ধরে আছেন। এই প্রতীকটি দেশের বিভিন্ন মন্দিরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে , যানবাহন এবং নানান ইমারতেও চিত্রিত হয়েছে।

শিবলিঙ্গ
শিবলিঙ্গ

শিব লিঙ্গ

শিব হল পরমেশ্বর ভগবান শিবের নির্গুণ ব্রহ্ম সত্বার একটি প্রতীকচিহ্ন। ধ্যানমগ্ন শিবকে এই প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। হিন্দু মন্দিরগুলিতে সাধারণত শিবলিঙ্গে শিবের পুজো হয়। শিব আত্মধ্যানে স্ব-স্বরূপে লীন থাকেন। আর সব মানুষকেও আত্মনিমগ্ন তথা ধ্যানমগ্ন হতে উপদেশ দেন।

“লয়ং যাতি ইতি লিঙ্গম্”- অর্থাৎ যাঁর মধ্যে সমস্ত কিছু লয় প্রাপ্ত হয়, তাই লিঙ্গ। শিব লিঙ্গের উপরে ৩টি সাদা দাগ থাকে যা শিবের কপালে থাকে, যাকে ত্রিপুণ্ড্র বলা হয়। শিবলিঙ্গ যদি কোনও জননেন্দ্রিয় বুঝাতো তাহলে শিবলিঙ্গের উপরে ঐ ৩টি সাদা তিলক রেখা থাকত না।

শিবলিঙ্গ ৩টি অংশ নিয়ে গঠিত, সবার নিচের অংশকে বলা হয় ব্রহ্ম পিঠ, মাঝখানের অংশ বিষ্ণুপিঠ এবং সবার উপরের অংশ শিব পিঠ । একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী, শিবলিঙ্গ শিবের আদি-অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!