আফ্রিকার দেশ ঘানায় হিন্দু ধর্ম কীভাবে বিস্তার লাভ করলো?
ঘানায় হিন্দু ধর্ম
পশ্চিম আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ ঘানা। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এটি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। উপনিবেশ শাসনকালে এর নাম ছিল গোল্ড কোস্ট। ঘানা শব্দের অর্থ যোদ্ধা রাজা। মধ্যযুগীয় ঘানা সাম্রাজ্য থেকে এ নামের উৎপত্তি। বর্তমান ঘানা থেকে উত্তর ও পশ্চিম দিকে অবস্থান ছিল ঘানা সাম্রাজ্যের।
আধুনিক ঘানার কয়েকশত মাইল উত্তর-পশ্চিমে ঊর্ধ্ব নাইজার নদীর তীরে অবস্থিত মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য ঘানার নামে দেশটির নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতার পর আফ্রিকান বাকী দেশগুলির স্বাধীনতার জন্য ঘানা নেতৃত্ব দেয়।
২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫৭৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঘানার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। ঘানার জনসংখ্যার প্রায় ৭২% খ্রীস্ট ধর্মের অনুসারী। ইসলাম ধর্ম ঘানার ২য় বৃহত্তম ধর্ম। এছাড়া ঘানাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সনাতন হিন্দু ধর্মানুসারী বসবাস করেন। বর্তমানে ঘানায় প্রায় ১৮ হাজার হিন্দু ধর্মানুসারী বসবাস করছেন। এদের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার-ই আফ্রিকান বংশোদ্ভুত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ।
আরো পড়ুনঃ আরব দেশ বাহরাইনে হিন্দুরা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে এলো!
ঘানায় হিন্দু ধর্মের প্রথম প্রবেশ ঘটে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হিন্দুদের দ্বারা। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় প্রচুর সংখ্যক সিন্ধ হিন্দু ঘানায় পাড়ি জমান। পরবর্তীতে স্বামী ঘানানন্দ সরস্বতী ও ইসকনের নেতৃত্বে ঘানায় হিন্দু ধর্ম বেশ সাড়া জাগায়।
স্বামী ঘানানন্দ সরস্বতী একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভুত কৃষ্ণাঙ্গ হিন্দু সন্ন্যাসী। তিনি ১৯৭৫ সালে স্বামী কৃষ্ণানন্দের কাছ থেকে দীক্ষা নেন এবং ঘানার রাজধানী আক্রায় হিন্দু মঠ স্থাপন করেন। স্বামী ঘানানন্দ ঘানাতে ৫টি মন্দির স্থাপন করেন, যা ঘানা তো বটেই, সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশে হিন্দু ধর্মের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এর বাইরে ঘানায় বসবাসরত ভারতীয় হিন্দুদেরও নিজস্ব মন্দির রয়েছে। এছাড়া ঘানায় ইসকনের বেশ শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ জার্মানিতে যেভাবে হিন্দু ধর্মের শক্তিশালী অবস্থান তৈরী হলো!
ঘানার হিন্দুরা শৈব ও বৈষ্ণব, হিন্দু ধর্মের এই দুটি দ্বারায় বিভক্ত। শৈব মতবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বামী ঘানানন্দ এবং বৈষ্ণব মতবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসকন। ঘানার রাজধানী আক্রার অদূরে মেডি শহরে অবস্থিত শ্রী রাধা গোবিন্দ স্বামী মন্দির, ঘানায় ইসকনের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়া সমগ্র ঘানাজুড়েই ছোট ছোট দলে ইসকনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ঘানায় আর্য সমাজ, শ্রী সত্য সাঁই বাবা ম্যুভমেন্ট, দ্য আকানুম নম শিবায় হিলিং চার্চ প্রভৃতি হিন্দু সংগঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ঘানার হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো, হোলি ও দিওয়ালী। এছাড়া ইসকন কর্তৃক বেশ কিছু উৎসব পালিত হয়। ঘানার বিখ্যাত হিন্দু ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, স্বামী ঘানানন্দ এবং বিখ্যাত রাজনীতিক ভিক্টোরিয়া লক্ষ্মী হামাহ।
আরো পড়ুনঃ ইতালি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা দুনিয়া জুড়ে পাওয়া গেছে অসংখ্য রহস্যময় শিবলিঙ্গ
ঘানায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন