হিন্দু ধর্মের অজানা কাহিনী

একজন নারী কী গুরু হতে পারেন? নারীরা কী দীক্ষা দান করতে পারেন?

জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে আপনার মনে নিশ্চয় প্রশ্ন জেগেছে, একজন নারী কী গুরু হতে পারেন? নারীরা কী দীক্ষা দান করতে পারেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে চলুন জেনে নিই, প্রকৃত অর্থে গুরু কাকে বলে। গুরু শব্দের ‘গু’ দ্বারা ‘কু’ বা অন্ধকার, এবং ‘রু’ দ্বারা ‘সু’ বা শুভ আলো বোঝায়। অর্থাৎ যিনি এই বিশ্বচরাচরের যেকোন প্রাণির (মানুষসহ) মন থেকে অন্ধকার দূর করে অন্তরের লুকায়িত আলোক রশ্নিকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম, তিনিই গুরু।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ইতিহাস

বিশুদ্ধ মন্ত্র বা নাম উচ্চারণ করলেই প্রকৃত গুরু হওয়া যায়না। গুরুর মধ্যে কিছু বিশেষ গুণ থাকা প্রয়োজন। সনাতন ধর্মের গুরুদের মধ্যে বেশীরভাগ পুরুষ হলেও, অনেক নারীই তাদের নিজ কর্মগুণে গুরুর স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

তন্ত্রশাস্ত্রমতে, নারী বা স্ত্রী গুরুর নিকট দীক্ষা গ্রহণের বিশেষ বিধান রয়েছে। ‘তন্ত্রসার’ গ্রন্থে স্ত্রী গুরুর লক্ষণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— জিতেন্দ্রিয়া, সাধ্বী, সদাচারিণী, সর্বমন্ত্র সম্বন্ধে অভিজ্ঞা, সুশীলা এবং পুজো পদ্ধতিতে অনুরাগ রয়েছে, এমন নারীকে গুরু করা যায়।

তন্ত্রশাস্ত্রে স্ত্রী ও পুরুষের সমান অধিকার। এক্ষেত্রে কোন জাতধর্মের বিচার নেই। একজন শূদ্রাণীও কোনও ব্রাহ্মণকে দীক্ষা দিতে পারেন। ‘যোগিনীতন্ত্র’-এ বলা হয়েছে স্ত্রী গুরুর কাছে ইষ্টমন্ত্র গ্রহণ শুভ আর মা যদি তাঁর উপাসিত মন্ত্রে পুত্রকে দীক্ষা দেন, তা হলে তাতে আট গুণ ফললাভ হয়।

আরো পড়ুনঃ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিখ্যাত ৮টি কৃষ্ণ মন্দির দর্শন করুন

‘গুপ্তসাধনতন্ত্র’ গ্রন্থে স্ত্রী গুরুকে পুজো করার ধ্যান ও পদ্ধতি রয়েছে। এছাড়া ‘মাতৃকাতন্ত্র’ গ্রন্থে রয়েছে স্ত্রী গুরুর স্তব। গুরুর ধ্যান ও স্তব করে একজন মানুষের দিনের কাজ শুরু হয়। গুরু আমাদের অজ্ঞানতা ও অন্ধকার দূরীভূত করেন। একজন নারীও যে গুরু হতে পারেন, তা অনেককাল আগে দেখিয়েছে তন্ত্রশাস্ত্র।

এখানে উল্লেখ্য যে, তন্ত্রশাস্ত্রে স্ত্রী গুরুকে পূজা-অর্চনা করার অধিকারও দেয়া হয়েছে। তিনি দশমহাবিদ্যা পূজারও অধিকারিণী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!