এক কালের হিন্দু দেশ আফগানিস্তানে বর্তমানে কী হিন্দু আছে?
আফগানিস্তানে হিন্দু ধর্ম! আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি ভূ-বেষ্টিত রাষ্ট্র। আফগানিস্তান প্রাচীনকাল থেকেই এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিস্থল হিসেবে পরিচিত। বহু প্রাচীন বাণিজ্য ও বহিরাক্রমণ এই দেশের মধ্য দিয়েই সংঘটিত হয়েছে।
একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ভূখন্ডও ভারতবর্ষেরই অন্তর্গত ছিল। বর্তমান আফগনিস্তান একটি মুসলিম প্রধান দেশ হলেও একসময় এখানে বসবাস ছিল হিন্দু ও বৌদ্ধদের।
আরো পড়ুনঃ কানাডায় হিন্দু ধর্ম যেভাবে প্রভাবশালী অবস্থানে এলো
মহাভারতের গান্ধারী এই স্থানেরই ব্যক্তি ছিলেন। গান্ধারের রাজা ছিলেন শকুনি | গান্ধার শহরটি বর্তমানে কান্দাহার নামে পরিচিত | বৈদিক সাহিত্যে উল্লিখিত পখত উপজাতিদের উত্তরসূরিরাই পখতুন নামে পরিচিত |
হিন্দু রাজা জয় পালের আমলে আফগানিস্তানে মহাদেব অর্থাৎ শিবের উপাসনা করা হত। গোটা আফগানিস্তান জুড়ে ছিল ভগবান শিবের মন্দির৷ দেবাদিদেব মহাদেবের প্রায় একশো মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে এই দেশে৷ ঐতিহাসিক তথ্যে মিলছে, রাজা জয় পালকে আক্রমণ করেন সবুক্তগীন৷
ব্রিটিশ পুরাতাত্ত্বিক স্যর এস্টিন আফগানিস্তানে তাঁর গবেষণা চালানোর সময় বহু হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছিলেন৷ এমনকি বহু সূর্য মন্দির, মঠ, বহু লিপি উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে৷ আশ্চর্যের বিষয় আফগানিস্তান নামটাও এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘উপা-গানা-স্থান’ থেকে। যার মানে ‘স্বজাতীয় উপজাতিদের বাসস্থান’৷
কুশম এবং কিডারা নামেও দুই হিন্দু রাজা ছিলেন আফগানিস্থানে৷ তাঁদের রাজত্বকালেই আফগানিস্তানের সীমারেখা উজবেকিস্তান ও কাজাকিস্তান পর্যন্ত বর্ধিত হয়৷ এখনও তাসখন্দে বহু প্রাচীন একটি শিব মন্দির রয়েছে৷
আরো পড়ুনঃ পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মের মানুষেরা আদৌ কী ভালো আছে?
ইতিহাস অনুযায়ী কাশ্মীরের রাজা, আরব খালিফা মামুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন৷ সেসময় মামুন, বুখারা এলাকা জয় ও দখল করেন এবং বাগদাদকে রাজধানী করা হয়৷ ৬৬০ থেকে ৮৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দে আফগানিস্তানে ব্রাহ্মণ রাজা খিংলা ও কালকা রাজত্ব করেছিলেন৷ সেসময়ই বড় ঝটকা লাগে রাজত্বে৷ সবুক্তগীনের পুত্র মহম্মদ গজনী যুদ্ধে জিতে রাজত্বের দখল নিয়ে নেন৷ রাজা জয়পাল দেব যুদ্ধে হেরে যান ও সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন৷
এক সময় শিবের পূজারীতে পরিপূর্ণ ছিল আফগানিস্তান। শিব – পার্বতীকে মন্দিরে স্থাপিত করে পুজো করা হত | শিবের আরাধনার মন্ত্রে‚ উপাসনার পবিত্রতায় মুখরিত হত আকাশ বাতাস।
আফগানিস্তান অঞ্চলে হওয়া নানা প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য থেকে ওই অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেছে | ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক কর্মকর্তা স্যার এস্টাইনের করা খননকার্যে অসংখ্য বিগ্রহ বা মূর্তি ও শিলালিপি উদ্ধার হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে আবিষ্কৃত হওয়া জিনিসগুলির ছবির মধ্যে একটি সূর্যমন্দির ও গণেশ বিগ্রহেরও চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেছে।
আজ ঠিক যে জায়গায় কাবুলের মূল মসজিদটি অবস্থিত সেখানে ছিল একটি হিন্দু মন্দির | সবুক্তগিন যুদ্ধজয়ের পর সেই মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে তোলেন | আফগান লোকগাথায় আজও সেই কাহিনির উল্লেখ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনামে হিন্দু ধর্ম যেভাবে অন্যতম প্রধান ধর্ম হয়ে উঠেছে!
বর্তমানে আফগানিস্তানে সর্বসাকুল্যে ৭০০০ হিন্দু বসবাস করছেন। অথচ ১৯৭০ সালেও প্রায় ৫ লক্ষ হিন্দু ছিলেন আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানে রাজধানী কাবুলে ১৯৯২ সালেও ২লক্ষাধিক হিন্দু ও শিখ ছিলো। এখন কাবুলে প্রায় ৩০০০ এর মতো হিন্দু আছে।
আফগানিস্তানে উগ্রপন্থার শিক্ষা নিয়ে বড় হচ্ছে মুসলিম শিশুরাও। স্কুলে হিন্দু শিশুদের শয়তান, কাফির বলে গালাগাল ও ইট ছুড়ে মারে অন্যান্য মুসলিম শিশুরা। তাই আফগানিস্তানের হিন্দু শিশুরা প্রাইভেট স্কুলে অথবা মন্দির স্কুলে পড়ে। কাবুলের আশামাই মন্দিরের পুরোহিত নরেন্দ্র শর্মা বলেন,”আমরা ভারতে গেলে হই আফগানী আর আফগানিস্তানে থাকলে হই হিন্দু কাফির! আমরা কোথায় যাবো?
আফগানিস্তানে হিন্দু ধর্ম!