Videosমন্দির

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে যে সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদের ঢুকতে দেয়া হয়নি!

বিখ্যাত হিন্দু মন্দির পুরীর জগন্নাথ মন্দির। তবে এই মন্দিরের দ্বার সবার জন্য অবারিত নয়। অহিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে কেবলমাত্র শিখ ধর্মানুসারীদেরই জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। তবে হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিই পুরী জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি।

চলুন দেখে নেই কোন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি-

মহাত্মা গান্ধী
মহাত্মা গান্ধী

১. মহাত্মা গান্ধী

ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ১৯৩৪ সালে পুরী গিয়েছিলেন। তিনি মুসলিম-খ্রিস্টান-দলিত মিলিয়ে অসংখ্য মানুষকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন জগন্নাথ মন্দিরে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গান্ধীজি চাইলে একা প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তার সঙ্গের বিধর্মীরা কোনভাবেই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেনা।

আরো পড়ুনঃ হিন্দু ব্যতীত শুধু শিখরাই কেন পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রবেশ করতে পারে?

এ কথা শুনে মহাত্মা গান্ধী ফিরে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ঈশ্বরের কাছে মানুষের এতো ভেদাভেদ কেন?” অবশেষে তিনি জগন্নাথ মন্দিরের মূল ফটক থেকে বিশাল হরিজন পদযাত্রা করেছিলেন। সেদিন মহাত্মা গান্ধীর সাথে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন আচার্য বিনোভা ভাবেও।

ইন্দিরা গান্ধী
ইন্দিরা গান্ধী

২. ইন্দিরা গান্ধী

কাশ্মীরি ব্রাহ্মণের কন্যা হয়েও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা বিয়ে করেছিলেন পার্সি যুবক ফিরোজ গান্ধীকে। তাই বিবাহসূত্রে তিনি হয়ে গেলেন পার্সি। ফলে ১৯৮৪ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই তাকে ফিরে আসতে হয়েছিল জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার থেকে।

পুরী মন্দির
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও ফিরে আসতে হয়েছিল পুরী জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার থেকে। রবীন্দ্রনাথ আদতে ছিলেন একেশ্বরবাদী, ব্রাহ্ম উপাসক। তার ওপর ঠাকুর বংশে আছে পিরালি (পীর আলী থেকে উদ্ভূত) ব্রাহ্মণত্বের বিতর্ক। ফলে পুরী মন্দিরে আর ঢোকা হয়নি রবি ঠাকুরের।

আরো পড়ুনঃ পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে কেন জগন্নাথ দেবের হাত নেই?

পুরীর জগন্নাথ মন্দির
শ্রীল প্রভুপাদ

৪. ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদ

১৯৭৭ সালে পুরীতে এসেছিলেন ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদ। কিন্তু সঙ্গে বিদেশী অহিন্দু ভক্ত থাকায় পুরী মন্দিরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ফলে জগন্নাথদেবকে দর্শন না করেই প্রভুপাদকে ফিরে আসতে হয়েছিল।

লর্ড কার্জন
লর্ড কার্জন

৫. লর্ড কার্জন

১৮৮৯ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড কার্জন। জন্মসূত্রে ব্রিটিশ হলেও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। ১৯০০ সালে তিনি পুরীর জগন্নাথ মন্দির দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল কার্জনকেও।

আরো পড়ুনঃ প্রাম্বানান মন্দির: মুসলিম প্রধান ইন্দোনেশিয়ার জাভায় হাজার বছরের পুরনো শিব মন্দির

ভি আর আম্বেদকর
ভি আর আম্বেদকর

৬. ভি  আর আম্বেদকর

ভারতের সংবিধান প্রণেতা ভি আর আম্বেদকর জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক দলিত পরিবারে। এছাড়া পরবর্তীকালে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে বৌদ্ধ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ফলে ১৯৪৫ সালে পুরী ভ্রমণকালে জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে চাইলেও তাকে অনুমতি দেয়া হয়নি।

জগন্নাথ মন্দির
গুরু নানক

৭. গুরু নানক

শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক ১৫০৮ সালে পুরীতে এসেছিলেন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিষ্য মারদানা। তারা জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়। পরে পুরীর রাজা জগন্নাথদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাকে নিয়ে আসেন মন্দিরে। সেই থেকে এই মন্দিরে শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ ভারতের এই দুর্গা মন্দিরে পুরুষ ভক্তদের নারীবেশে পুজো দিতে হয়

পুরীর-জগন্নাথ-মন্দিরের-অলৌকিক-রহস্য
মহাচক্রী শিরিনধরণ

৮. মহাচক্রী শিরিনধরণ

২০০৫ সালে থাইল্যান্ডের ক্রাউন প্রিন্সেস প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন জগন্নাথ মন্দিরে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হওয়ায় তাকে মন্দিরের ভেতর প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

৯. এলিজাবেথ জিগলার

সুইস নাগরিক এলিজাবেথ জিগলার ২০০৬ সালে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দান করেছিলেন এক কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা। কোন একক ব্যক্তির কাছে থেকে এই মন্দিরে এখন পর্যন্ত এটি সর্বোচ্চ দান। কিন্তু জন্মসূত্রে খ্রিস্টান হওয়ায় তিনি জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পাননি।

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রহস্য
সন্ত কবীর

১০. সন্ত কবীর

মাথায় মুসলিমদের ফেজ টুপি থাকায়, ভক্তি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সন্ত কবীরকে জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি ফেরার পর প্রধান পূজারীকে স্বপ্নাদেশ দেন স্বয়ং জগন্নাথদেব। জগন্নাথদেবের নির্দেশ মতো ফিরিয়ে আনা হয় সন্ত কবীরকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!