কেদারনাথ মন্দিরের ইতিহাস ও ট্যুর গাইড
কথিত আছে, শিবের বয়স যত, কেদারখণ্ড ততটাই প্রাচীন। বর্তমান কেদারনাথের এই মন্দিরটির নির্মাণকর্তা আদি শংকরাচার্য৷
কেদারনাথ মন্দির সনাতন হিন্দু ধর্মানুসারীদের অন্যতম প্রধান ও পবিত্র তীর্থস্থান। সনাতন ধর্মে উল্লেখিত চার ধামের একটি কেদারনাথ। এটি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত কেদারনাথ শহরে মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত একটি শিব মন্দির।
কথিত আছে, শিবের বয়স যত, কেদারখণ্ড ততটাই প্রাচীন। বর্তমান কেদারনাথের এই মন্দিরটির নির্মাণকর্তা আদি শংকরাচার্য৷ আদিতে যে মন্দিরটি ছিল সেটি পাণ্ডবরা নির্মাণ করেছিলেন৷ পুরাণের নানা দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে সাজানো মন্দির৷ মন্দিরের দরজায় নন্দীর বড় একটি মূর্তি রয়েছে৷ কথিত আছে, নন্দী নাকি শিবের রক্ষণাবেক্ষণ করেন৷
কথিত আছে, কেদারে এসে পঞ্চকেদার দর্শন না করলে নাকি কেদার-দর্শনের পুণ্য সম্পূর্ণ হয় না। একদা ভগবান নরনারায়ণ মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ে পুজো করেন শিবের। ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন শিব এবং কেদারে বাস করতে শুরু করেন। সেই থেকে কেদারে বাস দেবাদিদেবের।
আরো পড়ুনঃ হিন্দু ধর্মের ১০টি প্রতীক যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা
কবে যাবেন?
কেদারনাথ বেড়ানোর সবচেয়ে ভাল সময় হল গ্রীষ্মকাল। সাইট সিয়িং-এর জন্য আদর্শ সময়। বর্ষাকালে সাধারণত কেউ যায় না কেদারে এবং শীতকালে প্রায় ছ’মাসের কাছাকাছি কেদারনাথ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনও থাকেন না ওই সময়। শিব তখন থাকেন গুপ্তকাশী বা উখিমঠে। কেদারনাথের মতো বরফ খুব কমই দেখা যায়।
কী দেখবেন?
শীতকালে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে কেদারনাথের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়৷ তাই মূল মন্দিরও মোটামুটি ছ’মাস বন্ধ থাকে৷ লোকালয় স্তব্ধ, ফাঁকা হয়ে যায়, পুরোহিতরা নেমে আসতে বাধ্য হন, কিন্তু দেবতার পুজো তো বন্ধ করা যায় না, তাই ভগবান কেদারনাথও নেমে আসেন ওইসময়৷ তখন তার অস্থায়ী ঠিকানা হয় উখিমঠ৷ এখানে কিছুদিন থেকে আবার শীত শেষে ছ’মাস পর তিনি ফিরে যান কেদারখণ্ডে৷ পালকিতে চড়ে শিবের এই অবরোহণ এবং আরোহণের নাম ‘ডোলিযাত্রা’৷ শিবের নামা এবং ওপরে ওঠাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয় এখানে৷ তবে ডোলিযাত্রা দেখার ভাগ্য সবার থাকে না৷ ২০১৬-র মে মাসে খুলে গিয়েছে কেদারনাথ মন্দিরের দ্বার৷ উখিমঠ থেকে শিব ফিরে গিয়েছেন স্বস্থানে৷ তবে ২০১৩ সালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কেদারনাথের ডোলিযাত্রার পথ পাল্টে গিয়েছে৷ ধ্বংসলীলা যতই হোক, কেদারনাথের মন্দিরটি অক্ষতই ছিল৷
আরো পড়ুনঃ ভগবান কী সত্যি আছেন? আমরা কেন ভগবানকে দেখতে পাইনা?
কীভাবে যাবেন?
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে ট্রেনে হরিদ্বার চলে আসুন৷ দুন এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস, উপাসনা এক্সপ্রেস-এ যেতে পারেন হরিদ্বার৷ হরিদ্বার থেকে গাড়ি নিয়ে সীতাপুর, সেখান থেকে রাত্রিবাস করে শোনপ্রয়াগ পৌঁছন৷ শোনপ্রয়াগে চেকপোস্ট আছে৷ এখানে মেডিকেল চেক-আপ হয় এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ড পরীক্ষা করা হয়৷ কার্ড ছাড়া পুণ্যার্থী বা ভ্রমণার্থীদের কেদার যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না৷ এটা উত্তরাখণ্ড সরকারের নতুন নিয়ম৷
এরপর চার কিলোমিটার দূরে গৌরীকুণ্ডর যাত্রা শুরু৷ এই পথে সরকারি শেয়ার জিপের ব্যবস্থা আছে৷ হেঁটেও গৌরীকুণ্ড পৌঁছানো যায়৷ গৌরীকুণ্ড থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে ভীমবলি৷ এখানে মন্দাকিনীর ওপর একটা ব্রিজ তৈরি হয়েছে৷ ব্রিজ পেরিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার গেলে লিঞ্চোলি৷ লিঞ্চোলি থেকে কেদার পাঁচ কিলোমিটার৷ হরিদ্বার থেকে কেদার যাওয়ার বাসও পাবেন৷ অপূর্ব এই বাসযাত্রা৷
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ১৪২৮ সালের সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময়সূচী
বিমানে হরিদ্বারের কাছে জলিগ্রাণ্ট এয়ারপোর্টে নেমে আধঘণ্টা সফরে ঋষিকেশ পৌঁছতে পারেন, তারপর যোশিমঠ৷ উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন স্থান থেকে হেলিকপ্টারেও কেদার পৌঁছানো যায়৷
কোথায় থাকবেন?
নিউ হিমাচল হাউজ, শিবালিক ভ্যালি রিসোর্ট, গুপ্তকাশী চারধাম ক্যাম্প, কেদারনাথ ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউজ৷
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ পুজোর জন্য বুকিং নেওয়া হয়৷ এখন অনেক স্থানই আর আগের মতো নেই৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর অনেক কিছু চেনা যায় না৷ বিনায়ক চতুর্থী এবং দিওয়ালিতে এই মন্দিরে খুব জাঁকজমক উৎসব হয়। শ্রাবণ মাসে রাখিপূর্ণিমার ঠিক আগে অন্নকূট মেলা হয়৷
আরো পড়ুনঃ শাস্ত্রীয় মতে কোন দিন গর্ভধারণ করলে সু-সন্তান লাভ সম্ভব?