পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মের মানুষেরা আদৌ কী ভালো আছে?
পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মের মানুষেরা আদৌ কী ভালো আছে?
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পরিচিত দেশ পাকিস্তান। পাকিস্তানের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২২ কোটি। জনসংখ্যা বিবেচনায় এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ থেকে আলাদা হওয়া এই দেশটির অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলেও বেশ কিছু সংখ্যক হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও শিখ ধর্মাবলম্বী থেকে গিয়েছিলেন সেখানে।
সনাতন হিন্দু ধর্ম পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ওয়ার্ল্ড এটলাসের তথ্য মতে হিন্দু অধ্যুষিত ৫ম বৃহত্তম দেশ পাকিস্তান। ২০১৭ সালের জনগণনা অনুযায়ী পাকিস্তানে প্রায় ৪০ লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী বসবাস করে, যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১.৮৫ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড এটলাসের জরিপ থেকে আরো জানা যায় ২০৫০ সালে পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা হবে প্রায় ৫৬ লক্ষ। তবে পাকিস্তানী হিন্দুদের ওপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার বেড়েই চলেছে। সে হিসেবে ২০৫০ সালে আদৌ সংখ্যা বাড়বে কিনা সন্দেহ আছে।
আরো পড়ুনঃ ফিজিতে হিন্দু ধর্ম যেভাবে অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে স্থান করে নিল!
১৯৪৭ স্বাধীনতা লাভের সময় পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১০.৪ শতাংশ। তবে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান, স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে পাকিস্তানের হিন্দু জনসংখ্যার হার কমে যায়, কেননা বেশী সংখ্যক হিন্দু পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করতেন।
তবে পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা গত কয়েক দশকে ব্যাপক হারে কমেছে যার কারণ প্রতিনিয়ত সংখালঘু সম্প্রদায়ের উপর পাকিস্তানী সরকার, সেনাবাহিনী, আর উগ্রবাদী জনগনের পরিকল্পিত আগ্রাসন। The Human Rights Commission of Pakistan এর ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতিমাসে সেখানে ২৫ জন হিন্দু মেয়ে অপহনের স্বীকার হয় যার প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশী। ২০১২ সালে পাকিস্থানে “রিংকেল কুমারী” নামে একটি হিন্দু মেয়ের পরিণতি বেশ ঝড় তোলে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে।
পাকিস্তানের মোট হিন্দু জনসংখ্যার ৯৫ ভাগই বাস করে সিন্ধু প্রদেশে। করাচীতে কিছু হিন্দুদের আনাগোনা চোখে পড়ে, যদিও পাকিস্তানের রাজনীতিতে তাদের কোন ভুমিকা রাখার সুযোগ নেই। সরকারী উচ্চ পর্যায়ে হিন্দুদের কোন উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবু তার মাঝেও পাকিস্তানের কয়েকজন আলোচিত হিন্দু ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন, সাবেক ক্রিকেটার দানিশ কানেরিয়া, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ফ্যাশন ডিজাইনার “দিপক পের্বানি” যার তৈরিকৃত, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুর্তা পোশাকটি ঠাই পেয়েছে গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে, পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি রানা ভগবান দাস এবং পাকিস্তানের প্রথম হিন্দু নারী বিচারক সুমন কুমারী।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকায় হিন্দু ধর্মের এতো শক্তিশালী অবস্থানের প্রকৃত কারণ কী?
“পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিল ” পাকিস্তানে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় সংগঠন, যা রাষ্ট্র ও সামাজিকভাবে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করে। এটির প্রধান কার্যালয় করাচিতে। একসময় পাকিস্তানে অসংখ্য মন্দির থাকলেও বর্তমানে মন্দিরের সংখ্যা অনেক কম। করাচি শহরে বেশ কিছু মন্দির আছে যার মধ্যে ” শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দির, করাচি” অন্যতম। এটি শুধু মন্দিরই না, বলা যায়, পাকিস্তানে হিন্দুদের একসাথে মিলিত হবার একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে পালন করা হয়ে থাকে।
পাকিস্তানে বেশ কিছু বিখ্যাত হিন্দু মন্দির ও তীর্থস্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেলুচিস্তানের হিংলাজ মাতা মন্দির। এটি ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম পীঠ। এই মন্দির স্থানীয় বালুচ মুসলমানদের কাছেও পরম আদরণীয়। তাদের কাছে এটি “নানী কী হজ” নামে পরিচিত।
বেলুচিস্তানের আরেকটি বিখ্যাত মন্দির ‘কালাট কালী মন্দির’। রণচন্ডী, উগ্রমূর্তি এই দেবীকে সমীহ করে পুরো পাকিস্তান। মন্দিরের সমস্ত অনুষ্ঠানে যথাসম্ভব সাহায্য করেন বালুচ মুসলিমরা। দেবী এখানে পূজিত হচ্ছেন কয়েক হাজার বছর ধরে। সেই ৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে, মন্দিরের দ্বারে তা উর্দু ভাষায় লেখাও আছে।
আরো পড়ুনঃ কানাডায় হিন্দু ধর্মের প্রভাবশালী অবস্থান যেভাবে তৈরী হলো!
পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম, বরুণ দেব মন্দির, মুলতান সূর্য মন্দির, বরুণ দেব মন্দির, কাটাস রাজ মন্দির, পঞ্চমূখী হনুমান মন্দির, গোরকনাথ মন্দির প্রভৃতি। পাকিস্তানের শীর্ষ ১০টি হিন্দু মন্দির সম্পর্কে জানতে দেখতে পারেন আমাদের এই ভিডিও।
পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে তৈরী আমাদের এই প্রতিবেদন আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন।