ভৈমী একাদশী মাহাত্ম্য জানলে আপনিও পালন করবেন!
ভৈমী একাদশী মাহাত্ম্য | ভৈমী একাদশী কি | ভৈমী একাদশী পালনের নিয়ম ।
ভৈমী একাদশী মাহাত্ম্য
আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, বুধবার ভৈমী একাদশী পালিত হবে। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী ভৈমী একাদশী বা জয়া একাদশী নামে পরিচিত। ভৈমী একাদশী ব্রত পালনকারী পরম সৌভাগ্য লাভ করেন। ভবিষ্যোত্তরপুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদরূপে ভৈমী একাদশী মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে।
গরুড় পুরাণে মাঘ শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিকে ভৈমী একাদশী নামে অভিহিত করা হয়েছে। আবার পদ্মপুরাণ অনুসারে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে একাদশী তিথিকে ‘ভীমসেনী’ বা ‘ভৈমী’ একাদশী নামে অভিহিত করা হয়েছে।
যুধিষ্ঠির বললেন- হে কৃষ্ণ! আপনি কৃপা করে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর সবিশেষ বর্ণনা করুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন হে মহারাজ! মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী ‘জয়া’ নামে প্রসিদ্ধ। এই তিথি সর্বপাপবিনাশিনী, সর্বশ্রেষ্ঠা, পবিত্রা, সর্বকাম ও মুক্তি প্রদায়িনী। এই ব্রতের ফলে মানুষ কখনও প্রেতত্ব প্রাপ্তি হয় না। এই একাদশীর নিম্নরূপ উপাখ্যান শোনা যায়।
স্বর্গলোকে একসময় রাজত্ব করছিলেন ইন্দ্র। অন্যান্য দেবতারাও সেখানে বেশ সুখ দিন যাপন করছিলেন। পারিজাত পুষ্প শোভিত নন্দনকাননে তাঁরা অপ্সরাদের সাথে বিহার করতেন। একদিন পঞ্চাশ কোটি অপ্সরা-নায়ক দেবরাজ ইন্দ্র স্বেচ্ছায় আনন্দভরে তাদের নৃত্য করতে বললেন। অপ্সরাদের নৃত্যের সাথে গন্ধর্বগণ গান গাইতে লাগলেন। চিত্রসেন, পুষ্পদত্ত প্রভৃতি প্রধান প্রধান গন্ধর্বেরাও ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন। চিত্রসেনের স্ত্রীর নাম মালিনী। পুষ্পবন্তী নামে তাঁদের এক কন্যা ছিল। গন্ধর্ব পুষ্পদত্তের পুত্রের নাম ছিল মাল্যবান। পুষ্পবন্তীর রূপে মাল্যবান অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিল। বার বার কটাক্ষ দ্বারা পুষ্পবতী মাল্যবানকে বশীভূত করেছিল।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ২০২০ সালের একাদশী ব্রতের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী!
পুষ্পবতী ও মাল্যবান দুজনই নৃত্যগীতের সেই সভায় উপস্থিত ছিল। কিন্তু তাঁরা উভয়েই একে-অপরের প্রতি আকৃষ্ট থাকায়, পরস্পরের প্রতি কেবল দৃষ্টিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকলো, ফলে তাদের মন বিভ্রান্ত হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবেই গানের ক্রম বিপর্যয় ঘটলো। দেবরাজ ইন্দ্র বুঝতে পারলেন, পুষ্পবতী ও মাল্যবান পরস্পরের প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েছে। তখন ক্রোধবশে ইন্দ্র তাদের অভিশাপ দিলেন, রে মূঢ়, তোমরা দুজনই আমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করেছো। তোমাদের ধিক! এই মুহূর্ত্বে তোমরা পিশাচযোনী লাভ করে মর্ত্যলোকে নিজ দুষ্কর্মের ফল ভোগ করবে।
ইন্দ্রের অভিশাপে তারা দুজন মর্ত্যলোকে এসে, দুঃখিত মনে হিমালয় পর্বতে বিচরণ করতে লাগলো। পিশাচত্ব প্রাপ্ত হওয়ায় তারা অত্যন্ত দুঃখ ভোগ করতে লাগল। হিমালয়ের প্রচন্ড শীতে কাতর হয়ে নিজেদের পূর্বপরিচয় বিস্মৃত হল। এইভাবে অতিকষ্টে সেখানে দিনযাপন করতে লাগল।
একদিন পিশাচ নিজপত্নী পিশাচীকে বলল- বিন্দুমাত্র পাপ না করেও নরকযন্ত্রণার মতো পিশাচত্ব লাভ করেছি। সুতরাং আজ থেকে আর কখনও কোন পাপকর্ম করবনা। এই মনোবাসনা নিয়ে তাঁরা হিমালয় পর্বতে মৃতপ্রায় বসবাস করতে লাগলো। মাল্যবান ও পুষ্পবতীর পূর্বের কোন পূণ্যবশত সে সময় মাঘ মাসের শুক্লপক্ষীয় জয়া একাদশী তিথি উপস্থিত হলো। তাঁরা উভয়েই একটি অশ্বত্থ গাছের তলে অনাহারে নির্জলা অবস্থায় দিনাতিপাত করছিল। শীতের মারাত্বক প্রকোপে অনিদ্রায় তাদের রাত্রি অতিবাহিত হলো।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ২০২০ সালের সকল পূর্ণিমার সঠিক তিথি ও সময়সূচী
পরদিন সূর্যোদয়ের মাধ্যমে দ্বাদশী তিথি উপস্থিত হলো। নিজের অজান্তে তাঁরা জয়া একাদশীর দিন অনাহার ও রাত্রি জাগায় তাদের একাদশী ব্রত পালন করা হলো। জয়া একাদশী ব্রত পালনের ফলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় তাদের পিশাচত দূর হলো। মাল্যবান ও পুষ্পবতী দুজনেই পূর্বের রূপ ফিরে পেয়ে, স্বর্গে ফিরে গেলেন।
দেবরাজ ইন্দ্র তাদের দুজনকে দেখে বিষ্মিত হলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, কীভাবে তোমাদের পিশাচত দূর হলো? আমার অভিশাপ থেকে কে তোমাদের মুক্ত করলো?
তখন মাল্যবান বললেন, হে প্রভু, ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় জয়া একাদশী ব্রতে পূণ্য প্রভাবে আমাদের পিশাচত্ব দূর হয়েছে।
সব শুনে দেবরাজ বললেন, হে মাল্যবান, তোমরা আবার অমৃত পান করো। আর যারা একাদশী ব্রত পালন করবে এবং যারা কৃষ্ণভক্তি পরায়ণ তাঁরা আমাদেরও পূজ্য বলে জানবে। এই ইন্দ্রলোকে তুমি পুষ্পবতীর সাথে সুখে-শান্তিতে বাস করো।
হে মহারাজ! এই ‘জয়া’ ব্রত ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপকেও বিনাশ করে। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার দানের ফল লাভ হয়। সকল যজ্ঞ ও তীর্থের পুণ্যফল এই একাদশী প্রভাবে আপনা হতেই লাভ হয়। অবশেষে মহানন্দে অনন্তকাল বৈকুন্ঠ বাস হয়। এই জয়া একাদশী ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ২০২০ সালের দোল পূর্ণিমা বা হোলির নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী!