Videosমন্দির

বহু ভূমিকম্প সয়ে হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে হিমাচলের ‘বৈজনাথ মন্দির’

বৈজনাথ মন্দির মধ্যযুগীয় হিন্দু স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। হিমালয়ের ধৌলাধর পর্বতমালার পটভূমিতে ভারতের হিমাচল প্রদেশের বৈজনাথ শহরে এই মন্দির অবস্থিত। এই শৈব মন্দির সনাতন হিন্দু ধর্মানুসারীদের নিকট ভীষণ পবিত্র তীর্থস্থান।

এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ভগবান শিব। শিব এখানে বৈদ্যনাথ রূপে পূজিত হন। বৈদ্যনাথ থেকে বৈজনাথ। ভগবান শিব এখানে চিকিৎসকদের আরাধ্য দেবতা। তাই তিনি বৈদ্য অর্থাৎ চিকিৎসকদের নাথ বা দেবতা।

হিন্দু মন্দির
বৈজনাথ মন্দির

আরো পড়ুনঃ নেপালের হাজার বছরের পুরনো পশুপতিনাথ মন্দির

বহু দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এই মন্দিরে আসেন সুস্থতার আশায়। ধারণা করা হয় ১২০৪ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই মন্দির অসংখ্য শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত সহ্য করেছে। 

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কাংড়া উপত্যকা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও তিব্বত থেকে আসা বণিকদের কাংড়ায় পা দিতেই হতো। যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলে স্থানীয় শাসক ও রাজারা অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করেছেন। তবে সেই মন্দিরগুলোর অধিকাংশই ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গেছে।

প্রায় ৮০০ বছরের পুরাতন বৈজনাথ মন্দিরে দুটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। যা ‘বৈজনাথ প্রশস্তি’ নামে পরিচিত। শিলালিপি থেকে জানা যায়, পরম শিবভক্ত দুই ধনী ব্যবসায়ী আহুকা ও মন্যুকা ১২০৪ সালে এই মন্দির নির্মাণ করেন। আরো জানা যায়, মন্যুকার পিতার নাম সিদ্ধা ও মাতার নাম চিন্না। মন্যুকার ভাই আহুকা।

বৈজনাথ প্রশস্তি সারদা ও তকড়ি হরফে রচিত হয়েছিল। সারদা ভাষা ভারতবর্ষের উত্তর অংশে প্রচলিত ছিল। এই সারদা ভাষা থেকে বিবর্তিত হয়েছে আজকের গুরুমুখি ভাষা। তকড়িও প্রাচীন মধ্যযুগীয় হরফ। ১৯৪০ অবধি ডোগরি ভাষা এই হরফে লেখা হতো। পরে সে স্থান দখল করে দেবনাগরী। শিলালিপি থেকে আরো জানা যায়, কাংড়ার কাতোচ বংশীয় রাজা সংসারচাঁদ এই মন্দিরের অনেক সংস্কার করেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ বেলুড় মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

ভারতের নাগাড়া ঘরানায় তৈরী বৈজনাথ মন্দিরের শিখর আশি ফুট উঁচু। অনেকের ধারণা সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও লতাপাতার কারুকাজ করা আছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সেখানে কোন দুর্বোধ্য লিপি আছে, যার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই মন্দিরে খোদাই করা আছে রাম-সীতার বিবাহদৃশ্য। এছাড়া সেখানে গণেশ ও হনুমানসহ আরো অনেক দেব-দেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। প্রাচীন এই মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন শ্লোক খোদিত আছে।

বৈজনাথ মন্দির
বৈজনাথ মন্দিরের নন্দী মূর্তি

ভগবান শিবের বাহন নন্দীর একটি বিগ্রহ আছে এই মন্দিরে। বর্তমানে এই মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করে আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া।

মধ্যযুগে স্থাপিত বৈজনাথ মন্দির হিন্দু স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!