নেপাল কি এখনো হিন্দুরাষ্ট্র?
হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত, দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ নেপাল। নেপালের উত্তর চীন এবং পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে ভারতের সীমান্ত রয়েছে। নেপালের জনসংখ্যার শতকরা ৮১.৩ ভাগ সনাতন ধর্মানুসারী। জনসংখ্যার শতকরা অনুসারে, নেপাল বিশ্বের শীর্ষ হিন্দু দেশ। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, নেপালের হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ।
কিছুদিন আগ পর্যন্ত নেপাল ছিল সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের একমাত্র হিন্দু দেশ। কিন্তু ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়নের সময় নেপালকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে হিন্দু ধর্ম যেভাবে এখনো টিকে আছে
ভগবান শিবকে নেপালের রক্ষক দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নেপালে অবস্থিত বিখ্যাত শিব মন্দির, পশুপতিনাথ মন্দির, ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। সমগ্র বিশ্বের সনাতন ধর্মানুসারীদের নিকট এই মন্দির অত্যন্ত পবিত্র। নেপালের জাতীয় প্রাণি হলো গাভী। যেহেতু সনাতন ধর্মে গরুকে পবিত্র প্রাণি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেহেতু নেপালে গরু হত্যা বে-আইনী।
রামায়ণের অন্যতম প্রধান চরিত্র সীতা দেবীর জন্মস্থান মিথিলা রাজ্য, যা নেপালে অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়। সীতার বাবা জনক ছিলেন মিথিলার রাজা।
ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাগৈতিহাসিককালে ‘নে’ নামক একজন হিন্দু ঋষি কাঠমান্ডু উপত্যকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এবং নেপাল শব্দের অর্থ নে দ্বারা রক্ষিত স্থান। তিনি বাগমতী ও বিষ্ণুমতি নদীর সংগমস্থল টেকুতে ধর্মীয় আচার পালন করতেন। কথিত আছে যে, গোপাল সাম্রাজ্যের প্রথম রাজা হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ভুক্তমানকে। এই রাজবংশ ৫০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে নেপালকে শাসন করেছে।
আরো পড়ুনঃ হিন্দু জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশ!
একাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নেপালের দক্ষিণাংশ দক্ষিণ ভারতের চালুক্য সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। চালুক্যদের রাজত্বকালে নেপালের ধর্মে ব্যাপক পরিবর্তন আসে কারণ তৎকালীন সব রাজাই হিন্দু ধর্মের পৃ্ষ্ঠপোষকতা করতেন। গোর্খারাজ পৃথ্বীনারায়ণ শাহ কয়েক দশক ধরে যুদ্ধের পর কাঠমান্ডু উপত্যকা দখল করে ছোটবড় রাজ্যে বিভক্ত নেপালকে একটি রাষ্ট্রীয় সংহতি দান করেন। নেপালের ইতিহাসে এই সময় থেকে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে হিমালয় কন্যা নেপালের যাত্রা শুরু বলা যায়। এই পৃথ্বীনারায়ণ শাহকে আজকের নেপালের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।
নেপালের পতাকা বিশ্বের অন্যান্য পতাকা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের। হিন্দু মন্দিরগুলোর শীর্ষ চূড়ায়তে যে ধরণের ত্রিকোণাকৃতি পতাকা দেখা যায়, নেপালের পতাকাতেও সেরকম দুটি ত্রিকোণাকার আকৃতি দেখা যায়। বিশ্বাস করা হয়, ভগবান বিষ্ণু নেপালের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন এবং এই পতাকা প্রদান করেছেন।
নেপালের জাতীয় পঞ্জিকা বিক্রম সম্ভত একটি হিন্দু সৌর পঞ্জিকা। সমগ্র উত্তর ভারতেই এই পঞ্জিকা হিন্দু ধর্মীয় পঞ্জিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নেপালের সনাতন ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জন্মাষ্টমী, দশীন বাঁ দশোরা, ছট পূজা, মাঘ সংক্রান্তি, শিবরাত্রি, রামনবমী, রথযাত্রা, ঋষি স্নান প্রভৃতি।
নেপালের বিখ্যাত মন্দিরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পশুপতিনাথ মন্দির, মন কামনা মন্দির, দন্তকালী মন্দির, চ্যাঙ্গু নারায়ণ মন্দির, দক্ষিণকালী মন্দির, বুধনীল কান্ত মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ মন্দির, জনকপুর মন্দির প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
আরো পড়ুনঃ নেপালের শীর্ষ ১০ হিন্দু মন্দির
নেপালের অধিকাংশ জনসংখ্যা হিন্দু বিধায়, বরাবরই নেপালের রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন জগত সর্বক্ষেত্রেই হিন্দু ধর্মানুসারীদের জয় জয়কার।