চার ধাম যাত্রা সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জানা উচিত!
হিন্দু পুরাণ বলে চারধাম যাত্রায় মুছে যায় সব পাপ | কবে আদি শঙ্করাচার্য ‘চার ধাম‘ কথাটি প্রথম উচ্চারণ করেন‚ তার কোনও লিখিত প্রমাণ নেই | মূলত চারধাম ছড়িয়ে আছে ভারতবর্ষের চার প্রান্তে | উত্তরে বদ্রীনাথ‚ দক্ষিণে রামেশ্বরম‚ পূর্বে পুরী এবং পশ্চিমে দ্বারকা | বিংশ শতাব্দী থেকে চারধাম আবার পাল্টে যায় | নতুন চারধাম হয় গঙ্গোত্রী‚ যমুনোত্রী‚ কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথ |
চার ধাম যাত্রার সুযোগ জীবনে একবার আসে। এই যাত্রা পথ একইসঙ্গে দীর্ঘ, কঠিন এবং শেষপর্যন্ত লক্ষ্যপূরণ হলে একটি বড় প্রাপ্তিও! হরিদ্বার থেকেই সাধারণত চার ধামের যাত্রা শুরু হয়। হরিদ্বার থেকে যমুনোত্রী, সেখানে পবিত্র যমুনা নদীতে ডুব দিয়ে শুরু হয় পূণ্যার্থীদের তীর্থযাত্রা। এরপর গঙ্গোত্রী, সেখান থেকে কেদারনাথ, সবশেষে বদ্রীনাথ। পথে পড়ে অসংখ্য বিখ্যাত মন্দির। সেই মন্দিরগুলোতে পুজো দেন মানুষ। আর যাত্রাপথে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
চার ধাম যাত্রা শুরুর আগে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের আজকের আয়োজন থেকে সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।
আরো পড়ুনঃ বৃন্দাবন ধামের অজানা ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড
প্রথম ধাম: গঙ্গোত্রী
গঙ্গোত্রীর অবস্থান উত্তর কাশী জেলায়। গঙ্গোত্রী অঞ্চলের বৈশিষ্ঠ্য, চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সবুজ আর বিশুদ্ধ জল। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী গঙ্গোত্রীই গঙ্গা নদীর উৎস। গঙ্গোত্রীর জল চলে গিয়েছে চার ধামের পরের দু’টি শহর, প্রথমে বদ্রীনাথ, তারপর কেদারনাথে। গঙ্গোত্রীতে আপনি দেখবেন গঙ্গোত্রী মন্দির, উষ্ণ প্রস্রবন গাঙনানি। যে জলে রয়েছে গন্ধক। যাতে রয়েছে শরীরের ব্যথা, বেদনা উপশম হওয়ার উপাদান। আর রয়েছে জলে ডুবে থাকা শিবলিঙ্গ। বলা হয় এখানেই পা রেখে গঙ্গা দেবী প্রথম মর্ত্যে আগমন করেন।
দ্বিতীয় ধাম: যমুনোত্রী
যমুনা নদীর কাছে নিবেদিত এই শহর। বলা হয় এখানেই কালিন্দী নামের এক পর্বত যমুনা নদীর উৎস। তীর্থযাত্রীরা যমুনোত্রী যাওয়ার জন্য জানকিচট্টি থেকে কম সময়ে পৌঁছতে পারেন। তবে সেই ক্লান্তিও কমানোর ব্যবস্থা আছে। টাট্টুতে অথবা পালকিতে চেপেও যমুনোত্রী যাওয়া যায়। যেভাবেই যাওয়া হোক না কেন, জনপ্রতি খরচ পড়ে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো। এখানে প্রধান মন্দির ছাড়াও দেখার বস্তু সুর্যকুণ্ড, সপ্তর্ষিকুণ্ড আর জানকিচট্টি। ট্রেকিংয়ের জন্য দারুন জায়গা এই জানকিচট্টি।
আরো পড়ুনঃ কেদারনাথ মন্দির সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য
তৃতীয় ধাম: কেদারনাথ
রুদ্রপ্রয়াগ থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূরে, গুপ্তকাশী জেলায় অবস্থিত কেদারনাথ। একাধিক পাহাড় পেরিয়ে, কখনও চোখজুড়োনো সবুজ, কখনও উষ্ণ ঝরনার স্রোত আর সীমাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে কেদারনাথ পৌঁছনো যায়। বলা হয়, শিবের ১২টি জ্যোর্তিলিঙ্গের মধ্যে কেদারনাথ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে আপনি দেখবেন ভৈরব মন্দির, মহাপন্থ। তাদের ওপর রয়েছে সাতোপন্থ—যাকে বলা হয় স্বর্গে যাওয়ার প্রবেশদ্বার। এছাড়াও রয়েছে কেদারনাথ অভয়ারণ্য। এখানে বিভিন্ন রকমের গাছপালা ও প্রাণীর দেখা মেলে।
কেদারনাথ দর্শনের জন্য রেজিস্ট্রেশন: কেদারনাথ যাত্রার আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যিক। কাউন্টারে নিজে উপস্থিত থেকে নথীভূক্ত করানো যায় নিজের নাম। অথবা অনলাইনেও করাতে পারেন। আপনাকে দেওয়া হবে একটি ট্রিপ কার্ড। গোটা যাত্রায় যে কার্ড আপনাকে সঙ্গে রাখতে হবে।
মেডিক্যাল সার্টিফিকেট:গুপ্তকাশী বা শোনপ্রয়াগের মেডিক্যাল সেন্টার থেকে ডাক্তারের সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই আপনি কেদারনাথ ভ্রমণে যেতে পারবেন। যদি সেই রিপোর্টে কোনও কঠিন অসুখের কথা বলা হয় সেক্ষেত্রে আপনার হেঁটে কেদারনাথ যাওয়া যাবে না। তবে হেলিকপ্টারেও আপনি এখন কেদারনাথে যেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ হুগলীর বাঁশবেড়িয়ার প্রাচীন ও রহস্যময় কালী মন্দির!
চতুর্থ ধাম: বদ্রীনাথ
গাড়োয়াল হিমালয়ের মধ্যে অবস্থিত এই পবিত্র শহর দর্শনেও আপনার প্রয়োজন বিশেষ অনুমতির। বদ্রীনাথের মন্দিরে পৌঁছনোর জন্য জোশীমঠ থেকে একটি গাড়ি ভা়ড়া করতে পারেন। কিন্তু গাড়িগুলোকে বদ্রীনাথ যেতে দেওয়া হয় একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সকালে ৬-৭, ৯-১০, ১১-১২, দুপুরে ২-৩, বিকেলে ৪.৩০-৫.৩০)। মন্দিরের ভেতরে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চলে যেতে পারেন তিন নম্বর গেটে। সেখানে বেদ পাঠ পুজোর জন্য ২৫০০ টাকার একটি স্লিপ কিনুন। তার ১৫ মিনিটের মধ্যে আপনি মন্দিরের ভেতর ঢুকে মূর্তি দর্শন করতে পারবেন। এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। আর বন্ধ থাকে নভেম্বর থেকে।
চার ধাম যাত্রা শুধু আপনাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রশান্তি দেবে না, এই যাত্রার মাধ্যমে আপনি দেখা পাবেন এক অন্যরকম রোমাঞ্চের।