তিথি পরিচয় – পর্ব ০৩
সাল বা সন গণনার দুইটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। সৌর পদ্ধতি ও চন্দ্র পদ্ধতি। আবার মিশ্র রীতিতেও গণনা করা হয়। এবং মিশ্ররীতিতে গণনা করলেই মলমাস এর ধারণা পাওয়া যায়। মলমাস কি? এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই আমরা জানি না।
যদি কোন বছরে দেখা যায় যে ২৪ টি একাদশী এর জায়গায় ২৬ টি হয়ে যাচ্ছে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বুঝা যায় একটি মাস গণনায় অতিরিক্ত এসেছে। তাহলে এই অতিরিক্ত মাস এলো কোথা থেকে? এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে চন্দ্রমাস ও সৌরমাসের ধারণা পেলে।
চন্দ্র পদ্ধতিতে মাসের গণনা করলেও সন গণনা করা হয় সৌর পদ্ধতিতে। তাই হিন্দুধর্মের পূজা-পার্বন সহ যাবতীয় অনুষ্ঠানের সময় গণনা হয় চাঁদের পরিবর্তনের হিসাব অনুযায়ী। চন্দ্র পদ্ধতিতে প্রতিটি মাস ৩০ দিনের। পূর্নিমা থেকে পূর্নিমা পর্যন্ত সর্বমোট ৩০ দিন। এজন্যই সৌর বছরের হিসাব থেকে পার্থক্য তৈরী হয় কয়েক দিনের।
এভাবেই প্রতি তিন সৌর বছর শেষে দেখতে পাবেন যে ঐ বছর একটি চান্দ্রমাস বেশি হচ্ছে। তখন এই অতিরিক্ত মাসকে মল মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এবং মূল হিসাব থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত মাস-ই হচ্ছে মল মাস। আবার কোন এক মাসে যদি এমনটি দেখা যায় যে দুটি অমাবস্যা তিথি পরছে, তাহলে সেই মাসকেও মল মাস ধরা হয়।
মল শব্দের আবিধানিক অর্থ অশুভ। তাই এই মাসটিকেও অশুভ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাই, এই মাসে কোন পূজা-পার্বন, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি করা হয় না। তবে কেউ যদি শ্রাদ্ধ বা সপিণ্ডকরণ করতে চান, তাহলে তা করতে পারবেন।
মলমাসের অন্য নাম পুরুষোত্তম মাস। বলা হয়, ভগবান বিষ্ণু তার নাম অনুসারে এই মাসের নাম দেন। ১২টি হিন্দু মাস মিলে মোট ৩৫৪ দিন হয়, কিন্তু সূর্য সম্পূর্ণ একটি নিরয়ণ রাশিপথ ৩৬৫ ১⁄৪ দিনে সম্পন্ন করে। এর ফলে যে ১১ দিনের ফারাক তৈরি হয়, সেই অতিরিক্ত ১১ দিন প্রতি (২৯.৫৩/১০.৬৩) = ২.৭১ বছরে বা ৩২.৫ মাসে যোগ করে সমতা বিধান করা হয়। কার্তিক ও মাঘ মাসে কোনো মলমাস পড়ে না।