বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট মন্দির
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির কম্বোডিয়ার আঙ্করভাট মন্দির
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ কম্বোডিয়া। এই দেশটি কাম্পুচিয়া নামেও পরিচিত। বর্তমানে কম্বোডিয়া একটি বৌদ্ধ প্রধান দেশ হলেও, অতীতে কম্বোডিয়া ছিল একটি হিন্দু দেশ। এক হাজার বছরেরও আগে কম্বোডিয়া খমের জাতির আংকর সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল। আংকর সাম্রাজ্যটি ৬০০ বছর ধরে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত ছিল। খেমের সাম্রাজ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি শক্তিশালী হিন্দু-বৌদ্ধ সাম্রাজ্য।
ফুনান সাম্রাজ্যের সময়কালে কম্বোডিয়া প্রথম হিন্দু ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। পরবর্তীতে খেমের সাম্রাজ্যেরও অন্যতম অফিসিয়াল ধর্ম ছিল হিন্দু ধর্ম। কম্বোডিয়ায় হিন্দু ধর্মের অস্তিত্বের প্রধান প্রমাণ আঙ্করভাট মন্দির। আঙ্করভাট কম্বোডিয়ার আংকরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মধ্যযুগীয় মন্দির। সুবিশাল এই স্থাপনাটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মন্দির।
১২শ শতাব্দীতে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা ২য় সূর্যবর্মণ। তিনি এটিকে তার রাজধানী ও প্রধান উপাসনালয় হিসাবে তৈরি করেন। তখন থেকেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসাবে বিবেচিত। এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা ছিলেন বিষ্ণু। পরবর্তীকালে এই মন্দিরটিকে বৌদ্ধ মন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ যে হনুমান মন্ত্র পাঠ করলে শ্রীলঙ্কায় আজও দেখা দেন হনুমানজি
আঙ্করভাট মন্দিরের আরাধ্যদেবতা ছিলেন বিষ্ণু। এটি সূর্যবর্মণের মূল মন্দির ও রাজধানী হিসাবেও ব্যবহৃত হতো। আঙ্করভাটের নির্মাণশৈলী খেমের সাম্রাজ্যের স্থাপত্যকলার এক অনুপম নিদর্শন। কম্বোডিয়ার জাতীয় পতাকায় আঙ্করভাট মন্দির স্থান পেয়েছে। কম্বোডিয়ার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ আঙ্করভাট।
আঙ্করভাট সবচেয়ে বড় মন্দির হলেও সমগ্র আঙ্কর জুড়েই রয়েছে অসংখ্য মন্দির। আঙ্কর শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে, যার অর্থ হলো নগর। অর্থাৎ এটি মন্দিরের শহর। এই মন্দিরগুলোর বেশীরভাগই ছিল হিন্দু মন্দির। আঙ্করভাট এবং তাঁর পার্শ্ববর্তী মন্দিরের বেশীরভাগই শিবের মন্দির।
কালের আবর্তে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে কম্বোডিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার ঘটলে, ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীতে আঙ্করভাট মন্দির বৌদ্ধ মন্দিরে পরিণত হয়।
আরো পড়ুনঃ তারাপীঠকে কেন মহাপীঠ বলা হয়?
পশ্চিমা পরিব্রাজকদের মধ্যে এই মন্দিরে প্রথম আগমন ঘটে পর্তুগীজ ধর্মপ্রচারক আন্তোনিও দা মাগদালেনার। ১৫৮৬ সালে তিনি এই মন্দির এলাকা পরিভ্রমণ করেন। তবে পাশ্চাত্যে এই মন্দিরের কথা ছড়িয়ে পড়ে ফরাসী অভিযাত্রী অনরি মৌহত এর ভ্রমণকাহিনীর মাধ্যমে। তিনি প্রথম অবস্থায় বিশ্বাস করতে পারেন নি, খমেররাই এই মন্দির নির্মাণ করেছে। তাঁর ধারণা ছিল আঙ্করভাট মন্দিরটি রোম সাম্রাজ্যের সমসাময়িক। পরবর্তীকালে এই মন্দির এলাকা পরিষ্কার করার পর বেশ কিছু শিলালিপি পাওয়া যায়, যা থেকে আঙ্করভাট মন্দিরের প্রকৃত ইতিহাস উদঘাটিত হয়।
আঙ্করভাট মন্দির বর্তমানে কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এটি কম্বোডিয়াবাসীর গৌরব। ১৮৬৩ সালে প্রথম প্রবর্তনের পর থেকে কম্বোডিয়ার সকল পতাকাতেই আঙ্করভাটের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। সমগ্র বিশ্বে এটি একমাত্র ভবন যা কোন দেশের পতাকায় স্থান পেয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কেদারনাথ মন্দির সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য