কয়েক হাজার বছর ধরে জাপানে নিষ্ঠাভরে পূজিত হচ্ছেন হিন্দু দেবী সরস্বতী!
কয়েক হাজার বছর ধরে জাপানে নিষ্ঠাভরে পূজিত হচ্ছেন হিন্দু দেবী সরস্বতী!
শিরোনাম দেখে অবাক হলেন? তবে ঘটনা কিন্তু সত্যি! হাজার বছরের বেশী সময় ধরে সুদূর জাপানে পূজিত হচ্ছেন দেবী সরস্বতী। জাপানীদের অত্যন্ত প্রিয় এই দেবী সেখানে পূজিত হন “বেঞ্জাইতেন” নামে।
তবে আমাদের সরস্বতীর সঙ্গে জাপানের সরস্বতীর অবয়বে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ভারতবর্ষে দেবী চতুর্ভুজা হলেও জাপানের বেঞ্জাইতেন দ্বিভুজা। আরেকটি পার্থক্য চোখে পড়ার মতো! আমাদের সরস্বতীর বাহন হংস হলেও জাপানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেবীর বাহন নেই। তবে কোন কোন বিগ্রহে দেবীর সঙ্গে ড্রাগন বা সাপ দেখা যায়। ড্রাগন বা সাপ কেন দেবীর বাহন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে হিন্দু পুরাণ থেকে জানা যায়, মা সরস্বতী বৃত্রাসুরকে বধ করেছিলেন। ঋক বেদ অনুসারে বৃত্রাসুরের আরেক নাম অহি বা সাপ। সে কারণে জাপানে দেবী সরস্বতী তথা বেঞ্জাইতেনের বাহনরূপে ড্রাগন বা সাপের মূর্তি দেখা যায় বলে অনেকেই মনে করেন।
আরো পড়ুনঃ বিদ্যার দেবী সরস্বতীর বাহন হংস কেন?
হাজার বছরের বেশী সময় ধরে জাপানীরা মা সরস্বতী তথা বেঞ্জাইতেনের পূজা করে আসছেন। এমনকি বিশুদ্ধ সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে জাঁকজমকের সাথে হোম-যজ্ঞও করা হয়। জাপানী ভাষায় হোম-কে বলা হয় গোমা বা হাভান। আমাদের মা সরস্বতীর হাতে যেমন বীণা থাকে, তেমনই জাপানের দেবী বেঞ্জাইতেন-এর হাতে থাকে বিওয়া, যা জাপানের একটি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র।
সমগ্র জাপান জুড়ে প্রায় একশোটির বেশী মন্দিরে পূজিত হন মা সরস্বতী বা বেঞ্জাইতেন। জাপানের সাগামি উপসাগরের বিওয়া হ্রদের চিকুবু দ্বীপ, এনোশিমা দ্বীপ এবং সেতো অন্তর্দেশীয় সাগরের ইত্সুকুশিমা দ্বীপের মন্দির গুলিতে ধুমধাম করে পালিত হয় বেঞ্জাইতেনের পূজা।
জাপানের সবচেয়ে পুরোনো ও বিখ্যাত সরস্বতী মন্দিরটি অবস্থিত পশ্চিম টোকিওর ইনোকাশিরা পার্কে। জাপানের বেশ কিছু জলাশয়ের নাম বেঞ্জাইতেন। সে সকল জলাশয়ের মধ্যিখানে বা কোন এক কিনারে একটি মন্দির থাকে, যেখানে কোন মূর্তি বা বিগ্রহ থাকেনা। ওই জলাশয়ের জলকেই মা সরস্বতীরূপে পূজা করা হয়। অদ্ভুত হলেও সত্যি, ভারতেও সরস্বতী নামে একটি নদী রয়েছে। এছাড়া দেবী সরস্বতীর বাহন হাঁস এবং দেবীর পাদপদ্মকেও জল ছাড়া কল্পনা করা যায়না।
দেবী সরস্বতী ছাড়াও বহুকাল ধরেই জাপানে ইন্দ্র, ব্রহ্মা, গণেশ, লক্ষ্মী প্রভৃতি সনাতনী দেবদেবী বৌদ্ধ দেবদেবী হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রায় প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ যেমন ঋগবেদ, মনুসংহিতা, গীতা, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ, কামশাস্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থ জাপানী ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় দেবী সরস্বতীর সুদৃশ্য মন্দির!
জাপানের কোয়াসানে সংস্কৃত ভাষা শেখানো হয়। হিন্দুদের যেমন অগ্নিদেব আছেন তাই হিন্দুরা অগ্নিপুজো করেন। তেমনি জাপানেও শিঙ্গন ও তেন্দাই বৌদ্ধরা আছেন, যাঁদের অগ্নিপুজোর সঙ্গে সুপ্রাচীন হিন্দুধর্মের রীতিনীতি ও অগ্নিপুজোর মিল আছে। জাপানের অন্তত ১২০০ মন্দিরে বিশুদ্ধ সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করেই তাঁরা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেন। সংস্কৃত তাই তাঁদের কাছে অতি পবিত্র ভাষা।