মন্দির

১২০০ বছরের প্রাচীন গ্রীক ঘরানার এই মন্দির নাকি তৈরী করেছিলেন স্বয়ং পঞ্চপাণ্ডব!

১২০০ বছরের প্রাচীন গ্রীক ঘরানার এই মন্দির নাকি তৈরী করেছিলেন স্বয়ং পঞ্চপাণ্ডব!

ভারতের জন্মু থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে হিমালয়ের কোলে কাশ্মীরের উধমপুর জেলার পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণিতে লুকিয়ে রয়েছে, গ্রীক বা হেলেনিস্টিক শিল্পকলায় নির্মিত একটি সুদৃশ্য মন্দির। প্রচলিত ধারা থেকে বহুদূরে অবস্থান করা এই মন্দিরের নাম ক্রিমচি মন্দির। স্থানীয় বিশ্বাস ও প্রাচীন গ্রিক সুষমায় সৌন্দর্য লাভ করেছে এই মন্দির স্থাপত্য।

এই মন্দির চত্বরে রয়েছে মোট ৭টি মন্দির। এর মধ্যে ৫টির অবস্থা ঠিকঠাক আছে। এই মন্দিরগুলির নির্মাণশৈলী খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে খুবই জনপ্রিয় ছিল। ওই সময়কালে এই অঞ্চলে পার্থিয়ান, ইন্দোগ্রীক ও বিভিন্ন যাযাবর জাতি এই অঞ্চলে বসত গড়েছিল। সম্ভবত তাদের উদ্যেগেই এই মন্দিরগুলি খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে রূপ পেয়েছিল

আরো পড়ুনঃ মুসলিম প্রধান ইন্দোনেশিয়ার জাভায় হাজার বছরের পুরনো শিব মন্দির প্রাম্বানান মন্দির

ক্লাসিক্যাল ঘরানায় তৈরী এই মন্দিরের কেন্দ্রে আছে গর্ভগৃহ, শীর্ষে শিখর ও তাঁর উপরে মুকুটের মতো অলংকার অমলক। গর্ভগৃহের সামনেই রয়েছে মণ্ডপ। গর্ভগৃহ ও মণ্ডপের মধ্যকার অন্তর্বর্তী অংশ হিসেবে আছ অন্তরাল। তবে বিষ্ময়কর ব্যাপার হলো, এই মন্দিরের বেশী শিলালিপি নেই। মন্দিরের ভাস্কর্যের মধ্যে নেই দেব-দেবীদের বিগ্রহ বা দ্বারপালের বিগ্রহ। বরং এর পরিবর্তে আছে হেলেনিস্টিক বা গ্রীক সুষমায় নির্মিত বিগ্রহ। মূল মন্দিরের সামনেই আছে সিংহ, যার ঘাড়ে আছে একরাশ কোঁকড়ানো কেশর। গান্ধারের শিল্পকলায় এই বিগ্রহ বেশ প্রচলিত ছিল। মূলত ভারতীয় ও গ্রীক শিল্পকলা মিলে তৈরী হয়েছে এই শিল্প স্থাপত্য।

এই মন্দির চত্বরের মধ্যে মাত্র দুটিতে আছে শিবলিঙ্গ। বাকিগুলিতে কোন বিগ্রহ নেই। কর্তৃপক্ষ কিছু মূর্তি সংরক্ষণ করেছেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, একটি সিংহ, পদ্মাসনা দেবী লক্ষ্মী ও বেলেপাথরের গণেশ। ক্রিমচি মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দেবিকা নদী। নদীর পাশে খনন করে পদচিহ্ন খোদাই করা প্রস্তরফলক পাওয়া গেছে।

ক্রিমচি মন্দিরের ভাস্কর্য
ক্রিমচি মন্দিরের ভাস্কর্য

এই মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে জ্যামিতিক নকশা। মন্দিরের ভাস্কর্যেও অভিনবত্ব আছে। মানবমূর্তিগুলিতে ভারতীয়ত্ব কম, বরং তাদের উন্নত নাসিকা গ্রীক দেব-দেবীর কথাই মনে করিয়ে দেয়।

আরো পড়ুনঃ ৫১ শক্তিপীঠের বর্তমান অবস্থান এবং কোথায় সতীর কোন অঙ্গ পড়েছিল জেনে নিন

ক্রিমচি মন্দিরের সঠিক নির্মাণকাল জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণীর রহস্যময় ঘোড়সোয়ারিদের ভাস্কর্য যে সময়কালের, ক্রিমচি মন্দিরও তাঁর সমসাময়িক। গান্ধার শিল্পকলার ভরকেন্দ্র ছিল সমগ্র পীরপঞ্জাল পর্বত।

স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের মতো করে আকার দিয়েছে এই মন্দিরকে। অনেকেরই বিশ্বাস, ক্রিমচি এলাকায় অজ্ঞাতবাসের সময় এই মন্দির বানিয়েছিলেন স্বয়ং পাণ্ডব ভ্রাতাগণ। স্থানীয় রাজা কীচক তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন।

কুলদেবতা দিবস পালনের উদ্দেশ্যে জম্মুবাসি বছরে দুইবার এই মন্দিরে সমবেত হন। ঐতিহাসিক এই স্থানে এখনও মানুষের আগমন ঘটে।

আরো পড়ুনঃ জানেন কী দেবী সরস্বতী আসলে কে? দেবী সরস্বতীর জন্ম, প্রণয়, বিবাহ সবই জটিল সম্পর্কের আবর্তে ঘূর্ণায়মান!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!