আজ অক্ষয় তৃতীয়া! জানেন কী কেন পালন করা হয় অক্ষয় তৃতীয়া?
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২০ কবে?
অক্ষয় তৃতীয়া ২০২০ পালিত হবে ২৬ এপ্রিল ২০২০, ১৩ বৈশাখ ১৪২৭, রবিবার
অক্ষয় তৃতীয়া কেন পালন করা হয়?
অক্ষয় তৃতীয়া হিন্দু ধর্মানুসারীদের নিকট অত্যন্ত পবিত্র তিথি। বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়।
অক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, যা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়না। সংস্কৃত ভাষায়, “অক্ষয়” শব্দটি “সমৃদ্ধি, প্রত্যাশা, আনন্দ, সাফল্য” নির্দেশ করে, অপরদিকে “ত্রিত্য” অর্থাৎ “তৃতীয়” অর্থে অবিস্মরণীয়, চিরস্থায়ী, সর্বদা নিকৃষ্টতম”।
আরো পড়ুনঃ বুদ্ধ পূর্ণিমা ২০২০ তারিখ ও সময়সূচী সঠিক পঞ্জিকা অনুসারে
প্রচলিত বিশ্বাসমতে, অক্ষয় তৃতীয়ায় কোন শুভ কাজ করলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। অক্ষয় তৃতীয়ার পূণ্য লগ্নে খুলে দেয়া হয় ছয় মাস বন্ধ থাকা চার ধাম অর্থাৎ কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী। মন্দিরগুলোর দ্বার খুললে দেখা যায়, তখনও প্রজ্বলিত রয়েছে ছয় মাস আগে জ্বালানো অক্ষয়দীপ।
সাম্প্রতিক কালে অক্ষয় তৃতীয়াতে স্বর্ণ বা রৌপ্যের গয়না কেনা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই তিথিতে রত্ন বা জিনিসপত্র কিনলে গৃহে শুভ যোগ হবে। জীবনে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি আনতে মানুষ এই দিন কিছু না কিছু কিনে থাকেন।
অক্ষয় তৃতীয়ার উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য
- অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ লগ্নে জন্ম নিয়েছিলেন ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম।
- এই তিথিতেই বেদব্যাস ও গণেশ মহাভারত রচনা শুরু করেছিলেন।
- এ দিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
- অক্ষয় তৃতীয়ার পূণ্যলগ্নে কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ভগবান শিব তাকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিন কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এই দিনটিতে বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
- প্রতি বছর পুরীর জগন্নাথ ধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে রথ নির্মাণ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই।
- এই তিথিতেই সত্য যুগের অবসান হয় এবং ত্রেতা যুগের সূচনা হয়।
- এই তিথিতেই দুর্যোধনের রাজসভায় দ্রোপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করা হয়। তবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্রোপদীকে সেই লজ্জা থেকে রক্ষা করেন। অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
- এই তিথিতেই ছয় মাস বন্ধ থাকা চারধামের দ্বার ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
- এ দিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটেছিলো।
- এই তিথিতেই শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেখা করেছিলেন তার বাল্য সখা সুদামা। এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ সুদামার সকল দুঃখ মোচন করেছিলেন।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে হিন্দু ধর্মে অক্ষয় তৃতীয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
আরো পড়ুনঃ অনেক পরিশ্রম করে এই চার রাশির মহিলাদের জীবনে উন্নতি করতে হয়
অক্ষয় তৃতীয়ার ফর্দ/উপকরণঃ
অক্ষয় তৃতীয়াতে সাধারণত বাড়িতেই পুজো করা হয়। এই পুজোর জন্য যে উপকরণগুলো প্রয়োজন হয়, তার একটি ফর্দ নিম্নে দেয়া হলো।
সিদুঁর, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগর্ব্য, তিল, হরিতকী, ফুল, দুর্ব্বা, তুলসি, বিল্বপত্র, ধূপ, প্রদীপ, ধূনা, মধুপর্ক বাটি ২, আসনাঙ্গুরীয় ২, দই, মধু, চিনি, ঘি, পুজোর জন্য কাপড় ১, শাটী ১, নৈবেদ্য ২,কুচো নৈবেদ্য ১, সভোজ্য জলপূর্ণ ঘট ১, বস্ত্র ১, পাখা ১, দক্ষিণা।
আরো পড়ুনঃ নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির – প্রতিদিন সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠে যে শিব মন্দির
অক্ষয় তৃতীয়াতে যে বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিত
সনাতন বিশ্বাসমতে, অক্ষয় তৃতীয়ায় কোন শুভ কাজ করলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। আর যদি কোন খারাপ কাজ করা হয় তবে সেটি হবে অক্ষয় পাপ। কাজেই এ দিনটিতে অত্যন্ত সাবধানতার সাথে যেকোন কাজ করা উচিত। সচেতন থাকতে হবে, যেন নিজের অজান্তেও কোন মন্দ কাজ না হয়। এদিন যেন মুখ থেকে কোন কটু কথা বা গালিগালাজ না বেরোয়। এই দিনটিতে পরনিন্দা ও পরচর্চা করা যাবেনা। তাই এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকাই শ্রেয়। এ দিনটিতে ঠাকুর-দেবতার প্রতি নিজের মনকে নিবেদিত করতে হবে।