নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির – প্রতিদিন সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠে যে শিব মন্দির
নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির
বিশাল ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে শত-সহস্র বিচিত্র মন্দির। পাহাড়-পর্বত, গুহা, সমুদ্র উপকূল বা ঝর্ণা, প্রকৃতির বিভিন্ন কোনে দেখা মিলেছে হিন্দু মন্দিরের। কিন্তু তাই বলে সমুদ্রের জলের নিচে মন্দির? ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠছে তাই না?
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, ভারতের গুজরাটে আরব সাগরের নিচে রয়েছে এমনই একটি আশ্চর্যজনক মন্দির। এই মন্দিরের নাম নিষ্কলঙ্ক মহাদেব মন্দির। গুজরাটের ভবনগর থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে কলিয়াক নামক স্থানে আরব সাগরের জলের নিচে এই মন্দিরের অবস্থান। জোয়ারের সময় এই মন্দিরটি সাগরের জলের নিচে লুকিয়ে থাকে। প্রতিদিন ভাটার সময় এই মন্দির সমুদ্র থেকে জেগে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ মসজিদকে পাশে নিয়ে হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
কথিত আছে, ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে স্বজনহানি, লোকক্ষয় ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখে পাণ্ডবরা অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন। শ্রীকৃষ্ণের নিকট এই দহন যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় জানতে চাইলে, শ্রীকৃষ্ণ তাদের বলেন, একটি কালো পতাকা নিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করলে তাদের পাপক্ষয় হবে।
কৃষ্ণের উপদেশে পঞ্চপাণ্ডব কালো পতাকা হাতে পরিভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। এই ভবনগর সৈকতে এসে পতাকার রঙ সাদা হয়ে যায়। পাণ্ডবগণ ভাবলেন ঈশ্বরের করুণায় তাঁরা কলঙ্কমুক্ত হয়েছেন। তাই তাঁরা এখানে পাঁচটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করে পূজার আয়োজন করলেন। সেই থেকে এই মন্দির নিষ্কলঙ্কেশ্বর শিব মন্দির হিসেবে পরিচিতি পায়।
সমুদ্র তট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার হাঁটলে তবেই দর্শন পাওয়া যায় শিব ঠাকুরের। তবে আপনার ইচ্ছে মতো সময়ে গেলে দেখা পাবেন না নিষ্কলঙ্কেশ্বর মহাদেবের। জোয়ার-ভাটার সঠিক সময় জেনে তবেই আপনাকে মন্দির দর্শনে যেতে হবে। ভাটার সময় সমুদ্রের জল সরে যায় প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। আর ঠিক তখন সমুদ্রের বুক থেকে জেগে ওঠে শিব ঠাকুরের আপন নিবাস। কয়েক ঘন্টা পর যখন জোয়ার আসে তখন মন্দিরটি আবার মিলিয়ে যায় সমুদের জলে। তখন কেবল মন্দিরের উপরের পতাকা উড়তে দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ ভারতের এই রহস্যময় মন্দির বছরের ৮ মাস জলের তলায় থাকে
ভাটার সময় মন্দির জেগে উঠলে থকথকে কাদার মধ্য দিয়ে সাবধানে পা টিপে টিপে পৌছাতে হয় মন্দির। কেননা কাদার মধ্যে ছড়িয়ে থাকে ঝিনুক, ছোট ছোট শঙ্খ সহ নানা অজানা জিনিস। চলতি পথে দেখা যায় কোথাও অল্প জলে ছোট ছোট মাছ খেলে বেড়াচ্ছে। প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতো হেঁটে পৌছাতে হয় মন্দিরে।
মন্দিরের দু’পাশে দুটি স্তম্ভ রয়েছে যার ওপর লাগানো রয়েছে লাল ও গেরুয়া রঙের পতাকা। স্তম্ভ দুটি প্রায় পনেরো ফুট লম্বা। ভক্তরা মনস্কামনা পূরণের জন্য এই স্তম্ভ দুটিতে ডোর বাঁধেন। চওড়া চাতালে দৃশ্যমান পাঁচটি শিবলিঙ্গ। কোনওটির গায়ে লাগানো রয়েছে ফণা তোলা পিতলের সাপ, ঝোলানো আছে বড় দানার রুদ্রাক্ষের মালা। কারও গায়ে আবার চকচকে ত্রিশূল। ত্রিশূলের গায়ে ঝুলছে ডুমরু।
শিব ঠাকুরের পুজোর উপকরণ সামান্যই; চাল, গোটা নারকেল, একটু সিঁদুর আর নকুলদানা। খুঁতহীন অখন্ড চালের দানা দিয়ে নিষ্কলঙ্কেশ্বর শিবের পুজো হয়। আর প্রসাদ হলো শুকনো মুড়ি আর এলাচ দানা।
আরো পড়ুনঃ কেরালার হাজার বছরের প্রাচীন মন্দির পাহারা দেয় নিরামিশাষী কুমির
পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় যখন জোয়ার-ভাটার দৈর্ঘ্য বেশী থাকে, তখন মন্দিরটিতে গেলে বেশী সময় ধরে অবস্থান করা যায়। তবে আপনি চাইলে যেকোন দিন ভাটার সময় মন্দিরটি দর্শন করতে পারবেন।
নিষ্কলঙ্কেশ্বর মহাদেব মন্দির নিয়ে আমাদের এই লেখাটি আপনার কেমন লাগলো, তা কমেন্ট করে জানাতে একদম ভুলবেন না কিন্তু। আর লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন অন্যদের সাথে।
আরো পড়ুনঃ অজ্ঞাতবাসের সময় পাকিস্তানের এই শিব মন্দিরেই নাকি আত্মগোপন করেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব