শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের ৩০টি বাণী যা আপনার জীবনকে আরো সুন্দর করে তুলবে
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র একজন যুগাবতার ও ধর্ম প্রতিষ্ঠাতা। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ নামক সংগঠনের প্রবর্তক। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের পাবনা জেলার হেমায়তপুরে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত। তিনি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে মৃত্যুবরণ করেন। মূলতঃ সৎমানুষ ও সদদীক্ষা, সুন্দর সমাজ তথা শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় অনুকূলচন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রমের আদর্শ। তার মূল বক্তব্য হচ্ছে -মরো না, মেরো না, পারতো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো।
সনাতন পন্ডিতের আজকের আয়োজনে আমরা ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের এমন কিছু বাণী সম্পর্কে জানবো, যা আমাদের জীবনে চলার পথে অনুপ্রেরণা জোগাবে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী
১. কারো সাহায্য যখন তুমি না পাও , তখন পিতার কাছে যাও, তার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে তোমাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে। কৃতজ্ঞতা বোধ থাকতে হবে নচেৎ অমানুষ সেই সন্তান।
২. যার কাছ থেকে সকল ধরনের সহযোগীতা পেয়ে, পালন পোষণ পেয়ে আজ আমি পূর্ণ, তার শরীর হতে আমার শরীর আর এই মহান মানুষ টিকে-ই আমরা পিতা বলি ।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন বেদ সম্পর্কে বিখ্যাত মনিষীদের বাণী
৩.
মনের কথা প্রাণের ব্যাথা
বলিস কেবল তাকে পেলে
উপেক্ষা তোমায় করে না যে জন
যায় না তোমায় ঠেলে ফেলে।
৪.
মাটির শরীর মাটি হবে
মাটি ছাড়া নাই বিধান
মাটিরে তুই কররে
খাঁটি অমৃতেরই এনে নিদান।
৫. যে শাশুড়ী মা সে কিন্তু তোমার অর্ধেক অঙ্গের মা অর্থাৎ তুমি আর তোমার স্বামী দুজনে মিলে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ অর্থাৎ তোমার ও মা। আর মা মানেই জগত জননী সর্বেসর্বা। বৌমা আসলে তার আস্তে আস্তে কর্তৃত্ব হরায়, আবার ছেলেকে হারানো ভয় থাকে ছেলেরা আগে মা ঘিরে থাকে বিয়ের পর আস্তে আস্তে কমে যায় । তাই একটু দোষ গুন ধরে একটু রেগে কথা বলে। হয়তো বা মনের কিছু দুঃখ অন্য কাউকে বলে। সব বিষয় গুলো যদি গভীর ভাবে ভাবো দেখতে পাবে মায়ের কোন দোষ নেই। তখন তাকেই মাথায় করে রাখবে তুমি গৃহিণীর কন্যা হয়েই থাকবে।
৬.
আঁধ কথার সময় হতেই
করে করিয়ে যা শেখাবি
সেটি হবে মোক্ষম ছেলের
হিসাবে চল নয় পস্তাবি।
আরো পড়ুনঃ স্বামী বিবেকানন্দের অমূল্য বাণী যা বদলে দেবে আপনার জীবন
৭.
যতই পরের দোষ দিবি তুই
নিজের যা দোষ এড়াতে
পেয়ে বসবে সে দোষ তোমায়
দেবে না পা বাড়াতে।
৮.
সহিতে তুমি না পারো যদি
অন্যের কটু ব্যবহার
কেমন করে সইবে তারা
তোমার তিক্ত অত্যাচার।
৯. কেউ যদি তোমার নিন্দা করে করুক, কিন্তু খেয়াল রেখো তোমার চলন চরিত্রে নিন্দনীয় কিছু যেন কোনো ক্রমেই স্থিতিলাভ করতে না পারে, নিন্দা ব্যর্থ হয়ে উঠবে এমনি।
১০.
কাউকে যদি বলিস কিছু সংশোধনের তরে,
গোপনে তাকে বুঝিয়ে বলিস সমবেদনা ভরে।
১১.
যদি সাধনায় উন্নতি লাভ করতে চাও, তবে কপটতা ত্যাগ কর।
১২. কপট হয়ো না, নিজে ঠক না, আর অপরকেও ঠকিও না।
১৩. অমৃতময় বারি কপটের নিকট তিক্ত লবন-ময়, তীরে যাইয়াও তার তৃষ্ণা নিবারিত হয় না।
১৪. কপট ব্যক্তি অন্যের নিকট সুখ্যাতির আশায় নিজেকে নিজেই প্রবঞ্চনা করে, অল্প বিশ্বাসের দরুন অন্যের প্রকৃত দান হতেও প্রবঞ্চিত হয়।
আরো পড়ুনঃ জীবনে চলার পথে শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের যে বাণীগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে!
১৫. তুমি যাই দেখোনা কেন – অন্তরের সহিত সবার আগে তার ভালোটুকু দেখার চেষ্টা করো আর এই অভ্যাস তুমি মজ্জাগত করে ফেলো।
১৬. আত্ম-প্রতিষ্টার তাগিদে যারা শক্তিমান হয় তারা শক্তির দম্ভে সৎ লোককে অবমাননা করতে শুরু করে। চাটুকার ছাড়া অন্য লোককে তারা বরদাস্ত করতে পারে না। বহু লোক তাদের আচরণে অন্তরে অন্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আর তাই হয় তাদের কাল। অন্তত লোক অন্তরে তাদের কোন আসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।
১৭. অশিক্ষিতকে শিক্ষা দেওয়া বরং অনেক সোজা হয়, কুশিক্ষিতের শিক্ষক হওয়া সেটাই কঠিন সোজা নয়।
১৮. সরল ব্যক্তি উর্ধ্ব দৃষ্টি সম্পন্ন চাতকের মতো। কপটী নিম্ন দৃষ্টি সম্পন্ন শকুনের মতো। ছোট হও, কিন্তু লক্ষ্য উচ্চ হোক; বড় এবং উচ্চ হয়ে নিম্নদৃষ্টি সম্পন্ন শকুনের মতো হওয়ায় লাভ কি?
১৯. হিন্দু ধর্ম, মুসলমান ধর্ম, খৃষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি কথা আমার মতে ভুল, বরং ও সবগুলি মত।
২০. তোমার ভাষা যদি কুৎসা-কলঙ্ক জড়িতই হয়ে থাকে, অপরের সুখ্যাতি করতে না পারে, তবে যেন কারো প্রতি কোনও মতামত প্রকাশ না করে। আর, মনে-মনে তুমি নিজ স্বভাবকে ঘৃনা করতে চেষ্টা করো এবং ভবিষ্যতে কুৎসা-নরক ত্যাগ করতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ হও।
২১. তুমি লাখ গল্প কর, কিন্তু প্রকৃত উন্নতি না হলে তুমি প্রকৃত আনন্দ কখনই লাভ করতে পারবে না। কপটাশয়ের মুখের কথার সঙ্গে অন্তরের ভাব বিকশিত হয় না, তাই আনন্দের কথাতেও মুখে নীরসতার চিহ্ন দৃষ্ট হয়; কারন, মুখ খুললে কী হয়, হৃদয়ে ভাবের স্ফুর্তি হয় না।
আরো পড়ুনঃ জীবনে উন্নতি করতে চাইলে গীতার এই ৭টি উপদেশ আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে!
২২. পরনিন্দা করাই পরের দোষ কুড়িয়ে নিয়ে নিজে কলঙ্কিত হওয়া; আর, পরের সুখ্যাতি করা অভ্যাসে নিজের স্বভাব অজ্ঞাতসারে ভাল হয়ে পড়ে। তাই বলে কোন স্বার্থবুদ্ধি নিয়ে অন্যের সুখ্যাতি করতে নেই। সে তো খোসামদ। সে ক্ষেত্রে মন মুখ প্রায়ই এক থাকে না। সেটা কিন্তু বড়ই খারাপ, আর তাতে নিজের স্বাধীন মত প্রকাশের শক্তি হারিয়ে যায়।
২৩. হীরক যেমন কয়লা প্রভৃতি আবর্জ্জনায় থাকে, উত্তমরুপে পরিষ্কার না করলে তা জ্যেতি বেরোয় না, তিনি তো তেমনি সংসারে অতি সাধারন জীবের মত থাকেন, কেবল প্রেমের প্রক্ষালনেই তাঁর দীপ্তিতে জগৎ উদ্ভাসিত হয়। প্রেমীই তাঁকে ধরতে পারে। প্রেমীর সঙ্গ কর, তিনি আপনিই প্রকট হবেন।
২৪. তোমার নজর যদি অন্যের কেবল কু-ই দেখে, তবে তুমি কখনই কাউকে ভালবাসতে পারবে না। আর, যে সৎ দেখতে পারে না সে কখনই সৎ হয় না।
২৫. যার উপর যা’কিছু সব দাঁড়িয়ে আছে তাই ধর্ম, আর তিনিই পরম পুরুষ। ধর্ম কখনও বহু হয় না ধর্ম একই আর তার কোন প্রকার নেই। মত বহু হতে পারে, এমনিকি যত মানুষ তত মত হতে পারে কিন্তু তাই বলে ধর্ম বহু হতে পারে না।
২৬. সব মতই সাধনা বিস্তারের জন্য, তবে তা নান প্রকারে হতে পারে; আর যতটুকু বিস্তারে যা হয় তাই অনুভূতি, জ্ঞান। তাই ধর্ম অনুভূতির উপর।
২৭. কোন মতের সঙ্গে কোন মতের প্রকৃত পক্ষে কোন বিরোধ নেই, ভাবের বিভিন্নতা, রকমফের একটাকেই নানপ্রকারে একরকম অনুভব!
২৮. তুমি যাই দেখ না কেন, অন্তরের সহিত দেখার সর্ব্বাগ্রে তার ভালটুকুই দেখতে চেষ্টা কর, আর এই অভ্যাস তুমি মজ্জাগত করে ফেল।
২৯. এটা খুবই সত্য কথা যে, মনে যখনই অপরের দোষ দেখবার প্রবৃত্তি এসেছে তখনই ঐ দোষ নিজের ভিতরে এসে বাসা বেধেছে। তখনই কালবিলম্ব না করে ওই পাপপ্রবৃত্তি ভেঙ্গেচুরে ঝেঁটিয়ে সাফ করে দিলে তবে নিস্তার, নইলে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
৩০. তোমার মন যত নির্মল হবে, তোমার চক্ষ তত নির্মল হবে, আর জগৎটা তোমার নিকট নির্মল হয়ে ভেসে উঠবে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাণী গুলো নিশ্চয় আপনাদের অনেক কাজে আসবে।
আরো পড়ুনঃ ভগবত গীতার ৫টি সহজ উপদেশ! যেগুলো মেনে চললে জীবনে উন্নতি অনিবার্য!