আপনি কি জানেন রথযাত্রার আগে প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব?
আপনি কী জানেন জ্যেষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। এক-দুদিন নয় সেই অসুস্থতা থাকে টানা ১৫ দিন। শুনে হয়তো অবাক হচ্ছেন! ভাবছেন এটা আবার কীভাবে সম্ভব! এই ঘটনার পিছনে রয়েছে একটি সুন্দর গল্প। চলুন তবে জেনে নিই সেই গল্প।
মাধব দাস নামে জগন্নাথদেবের একজন পরম ভক্ত ছিলেন। ইহজাগতিক সকল কিছু পাশে সরিয়ে তিনি জগন্নাথদেবের সেবায় নিজেকে সমর্পিত করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার এই অবস্থা দেখে অন্যরা তাকে সাহায্য করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখান করে বলেন, তার কোন ভয় নেই। প্রভু জগন্নাথই তাঁকে রক্ষা করবেন।
আরো পড়ুনঃ বাড়ির সদর দরজায় স্বস্তিক বা গণেশের ছবি টাঙানো হয় কেন?
এদিকে মাধবের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। তিনি পুরোদমে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও তিনি জগন্নাথদেবের ওপর থেকে বিশ্বাস হারাননি। তিনি মনপ্রাণে জগন্নাথকে ডাকতে থাকেন। ভক্তের এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারেননি প্রভু জগন্নাথ। ভক্তের কষ্ট নিবারণ করতে জগন্নাথদেব হাজির হন। তার সেবাতেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন মাধব।
মাধব অবশ্য এসবের কিছুই জানতেন না। প্রবল অসুস্থতায় তিনি প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। একটু বোধশক্তি ফিরে আসতেই জগন্নাথদেবকে দেখে তিনি চমকে ওঠেন। আবেগে আপ্লুত মাধব কাতর কন্ঠে জগন্নাথদেবকে জিজ্ঞেস করেন, “প্রভু আপনি চাইলেই তো এক মুহূর্তেই আমাকে সুস্থ করে তুলতে পারতেন। তবে কেন আপনি আমার সেবা করলেন?”
আরো পড়ুনঃ জানেন কী ‘ওঁ’ ধ্বনি দিয়ে হিন্দু মন্ত্র কেন শুরু হয়?
তখন জগন্নাথদেব বলেন, প্রত্যেকটা মানুষকে তার নিজের ভাগের কষ্ট অবশ্যই ভোগ করতে হয়। যদি তিনি নিজ ঐশীশক্তিবলে মাধবকে সারিয়ে তুলতেন, তবে এই অবশিষ্ট কষ্ট ভোগ করার জন্য তাঁকে পুণরায় জন্মগ্রহণ করতে হতো। প্রভু জগন্নাথ চান নি, কেবলমাত্র এই কষ্ট ভোগ করার জন্য তার কোন ভক্ত আবার মর্ত্যধামে ফিরে আসুক।
জগন্নাথদেব আরো জানান, মাধবের এখনও পনেরো দিনের অসুখ বাকি আছে। মাধবের সেই অসুখ তিনি নিজের মধ্যে নিতে চান।
মাধব তা না চাইলেও জগন্নাথদেবের কাছে তিনি পরাস্থ হন। মাধবের সকল অসুখ নিজের মধ্যে ধারণ করেন প্রভু জগন্নাথ। সেই থেকে আজও প্রতি বছর ১৫ দিনের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। স্নানযাত্রার ১৫ দিন অসুস্থ থাকার পর শুরু হয় রথযাত্রা।
এই ১৫ দিন মন্দিরের মূল দরজা বন্ধ থাকে। জগন্নাথদেবকে তখন ৫৬ ভোগ দেওয়া হয় না। তাঁকে আয়ুর্বেদিক ভেষজ ভোগ নিবেদন করা হয়। শীতল প্রলেপ লাগানো হয় জগন্নাথের মূর্তিতে।