কারুকার্যময় হিন্দু স্থাপত্য শৈলীর অপরূপ নিদর্শন বাংলাদেশের কাদিপুর শিববাড়ি
কারুকার্যময় হিন্দু স্থাপত্য শৈলীর অপরূপ নিদর্শন বাংলাদেশের কাদিপুর শিববাড়ি
বাংলাদেশের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজার। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার কাদিপুরে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় মন্দির। এই মন্দিরটি কাদিপুর শিববাড়ি নামে পরিচিত। অত্যন্ত সুন্দর কারুকার্যময় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মন্দির পূণ্যার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় স্থান।
কাদিপুর শিববাড়ির মূল মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে অনেক দূর থেকে মন্দিরের সুউচ্চ চূড়ার দেখা পাওয়া যায়। মন্দিরের প্রবেশ পথে দেখা পাওয়া যায় ভৈরব মন্দিরের। সেখান থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলে দেখা মেলে মূল মন্দিরের। মূল মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন মা দুর্গা। এই মন্দিরের মা দুর্গা ভীষণ জাগ্রত।
আরো পড়ুনঃ হংসেশ্বরী মন্দির – হুগলীর বাঁশবেড়িয়ার প্রাচীন ও রহস্যময় কালী মন্দির!
মূল মন্দিরে রয়েছে মা দুর্গার সুন্দর মূর্তি। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে মায়ের কাছে কোন কিছু মানস করলে মা দুর্গা মনের আশা পূরণ করেন। প্রতি বছর দুর্গা পূজার সময় এই মন্দিরে সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। দেশ-বিদেশের পূণ্যার্থীরা মায়ের কৃপা লাভের আশায় ছুটে আসেন দুর্গাপূজার দিনগুলোতে।
দেবী দুর্গা ও ভৈরবের মন্দির ছাড়াও এই মন্দির প্রাঙ্গণে মনসা, বালি, শিব, শীতলা, চামুণ্ডা, শনিসহ অন্যান্য দেব-দেবীর মন্দির রয়েছে। দুর্গাপূজা ছাড়াও সারা বছর জুড়ে ভক্তদের মানত আর ওখানে আসা-যাওয়ার দৃশ্য লক্ষণীয়।
কাদিপুর শিববাড়ি মন্দিরের নয়নাভিরাম কারুকার্যময় শৈল্পিক সৌন্দর্য ও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। দুর্গাপূজার সময় এই মন্দিরকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে।
আরো পড়ুনঃ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে খুলে দেয়া হচ্ছে মায়াপুরের চন্দ্রোদয় মন্দির
কাদিপুর শিববাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে লোকমুখে শোনা যায়, বড়বাড়ি তথা শিববাড়ির লোকরা ছিলেন জমিদারবংশীয়। এই বংশের কোন এক বংশধর তাঁদের দীঘির পাড়ে বেলগাছের নিচে আসন পেতে নিয়মিত ভগবান শিবের সাধনা করতেন। শিবের সাধনা করলেও তখনো এ বাড়িতে কোন শিবলিঙ্গ ছিলনা। পরবর্তীকালে পুলক সোমের দীর্ঘ তপস্যার ফলে প্রায় ১৫০ বছর আগে একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়। বাড়ির পুরনো মন্দির সংস্কার করে শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়।
দৈব শিবলিঙ্গ পাওয়ার খবর লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে, ধর্মপ্রাণ ভক্তরা শিবলিঙ্গটি দর্শনের জন্য ভীড় জমাতে থাকেন এই বাড়িতে। সেই থেকে আজ অবধি এই ধারা অব্যাহত আছে। শিলাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই মন্দিরে প্রতিদিন পূজা অর্চনা, ভোগ ও আরতি হয়ে থাকে।
জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জমিদার পরিবার চমম আর্থিক সংকটে পতিত হয়। ফলে বাড়ির বনেদী পূজা অর্চনায়ও এর প্রভাব পড়ে। তবে তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসে কখনো ঘাটতি দেখা যায়নি। গত এক দশক থেকে মন্দিরটি তাঁর পুরনো জৌলুস ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে কাদিপুর শিববাড়ি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে সুন্দর মন্দিরের স্বীকৃতি পেয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বৃন্দাবন ধামের অজানা ইতিহাস ও ভ্রমণ গাইড